মাথা রেখে স্বামীর হাত দুটি ধরে তিন দিনের জ্বরবিকারে মারা গিয়েছে।
মৃত্যুর আগে গভীর রাত্রে তার জ্ঞান ফিরে এসেছিল। স্বামীর মুখের দিকে চেয়ে বলে উঠলো—তুমি কে গো?
ভবানী মাথায় বাতাস দিতে দিতে বললে—আমি। কথা বোলো না। চুপটি করে শুয়ে থাকো, লক্ষ্মী—
—একটা কথা বলবো?
—কী?
—আমার ওপর রাগ করনি? শোনো—কত কথা তোমায় বলি নাগর—
—কাঁদচ নাকি? ছিঃ, ও কি?
—খোকনকে আমার পাশে নিয়ে এসে শুইয়ে দ্যাও। দ্যাও না গো?
—আনচি, এই যাই—তিলু তো এই বসে ছিল, দুটো ভাত খেতে গেল এই উঠে—তুমি কথা বোলো না।
খানিকক্ষণ চুপ ক’রে শুয়ে থাকার পর ভবানীর মনে হোলো বিলুর কপাল বড় ঘামচে। এখন কপাল ঘামচে, তবে কি জ্বর ছেড়ে যাচ্চে? তিলু খেয়ে এলে রামকানাই কবিরাজের কাছে তিনি একবার যাবেন। খানিক পরে বিলু হঠাৎ তাঁর দিকে ফিরে বললে—ওগো, কাছে এসো না—আপনারে তুমি বলচি, আমার পাপ হবে? তা হোক্ বলি, আর বলতি পারবো না তো! তুমি আবার আমার হবে, সামনের জন্মে হবে?—হয়ো, হয়ো—খোকাকে দুধ খাওয়ায় নি দিদি, ডাকো—
—কি সব বাজে কথা বকচো। চুপ ক’রে থাকতে বললাম না?
—খোকন কই? খোকন?
এই তার শেষ কথা। সেই যে দেওয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে রইল, যখন খোকনকে নিয়ে এসে তিলু-নিলু ওর পাশে শুইয়ে দিলে, তখন আর ফিরে চায় নি। ভবানী বাঁডুয্যে রামকানাই কবিরাজের বাড়ি গেলেন তাঁকে ডাকতে। রামকানাই এসে নাড়ি দেখে বললেন—অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েচে—খোকাকে তুলে নিন মা—