পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

নাইনটি রুপীজ—নব্বুই টাকা। আমাদের ব্যবসা একডম gone west—মাটি হইলো। মারা যাইলো।

 হরকালী সুর এ ব্যাপারে অনেকদিন লিপ্ত আছে। নীল সংক্রান্ত কাজে বিষম ঘুণ। সে বুঝে-সুজে চুপ করে গেল। সে কি বলবে? সে ভবিষ্যতের ছবি বেশ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে।

 চাষের নীল বাজারে আর চলবে না। খরচ না পোষালে নীলচাষ অচল ও বাতিল হয়ে যাবে। সে ভাবলে—এবার ঘুনি ডাঙায় উঠে যাবে সায়েবের!

—সেদিন হেমন্ত অপরাহ্নে বড় সাহেব জেন্‌কিন্‌স শিপ্‌ টন্ সুন্দর ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করেছিল। রামগোপাল ঘোষের বক্তৃতা, হরিশ মুখুয্যের হিন্দু পেট্রিয়ট কাগজ, পাদ্রি লংয়ের আন্দোলন (দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’ এ সময়ের পরের ব্যাপার), নদীয়া যশোরের প্রজাবিদ্রোহ, সার উইলিয়ম গ্রে’র গুপ্ত রিপোট যে কাজ হাসিল করতে পারে নি, জার্মানি থেকে আগত কৃত্রিম নীলবড়ি অতি অল্পদিনের মধ্যেই তা বাস্তবে পরিণত করলে। কয়েক বছরের মধ্যে নীলচাষ একদম বাংলাদেশ থেকে উঠে গিয়েছিল।

 শিপ্‌টন্‌ সাহেবের মেম বিলাতে গিয়ে মারা গিয়েছিল। একটিমাত্র মেয়ে, সে সেখানেই তার ঠাকুরদাদার বাড়ি থাকে। শিপ্‌টন্ সাহেব এ দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাইলে না।

 একদিন নীলকুঠির বড় বারান্দার পাশে ছোট ঘরটাতে শুয়ে শুয়ে ইণ্ডিয়ান কর্ক গাছের সুগন্ধি শ্বেত পুস্পগুচ্ছের দিকে চেয়ে সে পুরনো দিনের কথা ভাবছিল। অন্যদিনের কথা।—

অনেকদূর ওয়েস্টসোর-ল্যাণ্ডের একটি ক্ষুদ্র পল্লী। কেউ নেই আজ সেখানে। বৃদ্ধা মাতা ছিলেন, কয়েক বৎসর আগে মারা গিয়েছেন। এক ভাই অষ্ট্রেলিয়াতে থাকে, ছেলেপুলে নিয়ে।—

 তাদের গ্রামের সেই ছোট হোটেল—আগে ছিল একটা সরাইখানা, উইলিয়ম রিট্‌সন ছিল ল্যাণ্ডলর্ড তখন—কত লোকের ভিড় হোতো সেখানে! ল্যাঙডেল পাইক্‌স আর গ্রেট গেব্‌ল্‌ সামনে পড়তো…পনেরো শো ফুট উঁচু

২৪৬