পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গয়ামেমকে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে শিপ্‌টন্‌ বললে—Oh, my dear, dearie—you are not afriad of the Big Bad Wolf...I call it a brave girl!

 নিস্তারিণী নাইতে নেমেছিল ইছামতীর জলে। কূলে কূলে ভরা ভাদ্রের নদী, তিৎপল্লার বড় বড় হলুদ ফুল ঝোপের মাথা আলো করেচে, ওপারের চরে সাদা কাশের গুচ্ছ দুলচে সোনালী হাওয়ায়, নীল বনকলমীর ফুলে ছেয়ে গিয়েচে সাঁইবাবলা আর কেঁয়ে-ঝাঁকার জঙ্গল, জলের ধারে বনকচুর ফুলের শিষ, জলজ চাঁপা ঘাসের বেগুনী ফুল ফুটে আছে তটপ্রান্তে, মটরলতা দুল্‌চে জলের ওপরে, ছপাৎ ছপাৎ করে ঢেউ লাগচে জলে অর্ধমগ্ন বন্যেবুড়ো গাছের ডালপালায়।

 কেউ কোথাও নেই দেখে নিস্তারিণীর বড় ইচ্ছে হোলো ঘড়া বুকে দিয়ে সাঁগর দিতে। খরস্রোতা ভাদ্রের নদী, কুটো পড়লে দুখানা হয়ে যায়—কামট কুমীরের ভয়ে এ সময়ে কেউ নামতে চায় না জলে। নিস্তারিণী এসব গ্রাহ্যও করে না, ঘড়া বুকে দিয়ে সাঁতার দেওয়ার আরাম যে কি, যারা কখনো তা আস্বাদ করে নি, তাদের নিস্তারিণী কি বোঝাবে এর মর্ম? তুমি চলেচ স্রোতে নীত হয়ে ভাটির দিকে, পাশে পাশে চলে কচুরিপানার ফুল, টোকাপানার দার, তেলাকুচো লতার টুকটুকে পাকা ফল সবুজের আড়াল থেকে উঁকি মারচে, গাঙশালিখ পোনা-শেওলার দামে কিচকিচ করচে—কি আনন্দ! মুক্তির আনন্দ! নিয়ে যাবে কুমীরে, গেলই নিয়ে! সেও যেন এক অপূর্বতর, বিস্তৃততর মুক্তির আনন্দ!

 অনেকদূর এসে নিস্তারিণী দেখলে গাঁয়ের ঘাটগুলো সব পেরিয়ে এসেচে। সামনে কিছুদূরে পাঁচপোতা গ্রাম শেষ হয়ে ভাসানপোতা গ্রামের গয়লাপাড়ার ঘাট। ডাইনে বনাবৃত তীরভূমি, বাঁয়ে ওপারে পটলের ক্ষেত, ঝিঙের ক্ষেত—আরামডাঙার চাষীদের। সে ভুল করেচে, এতদূর আসা উচিত হয় নি একা একা। কে কি বলবে! এখন খরস্রোতা নদীর উজানে স্রোত ঠেলে সাঁতার দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আর এগুনোও উচিত নয়। দক্ষিণ তীরে বনজঙ্গলের

২৪৯