পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

যৌবনের দীপ্তী, নিবিড় কেশপাশ পিঠের ওপর ছড়িয়ে আছে সারা পিঠ জুড়ে। বড় মায়া হোলো এই অসমসাহসী বধুটির ওপর তিলুর। গ্রামে কি হুলস্থূল পড়ে যাবে জানাজানি হয়ে গেলে এ কথা-তা এ কিছুই জানে না।

 অনেক বুঝিয়ে সত্ত্বনা দিয়ে তিলু ওকে সন্দের আগে নিজে গিয়ে ওদের বাড়ি রেখে এল। বলে এল, তার সঙ্গে নদীর ঘাটে নাইতে গিয়েছিল, এতক্ষণ তাদের বাড়ি বসেই গল্প করছিল। শাশুড়ী সন্দিগ্ধ সুরে বললেন-ওমা, আমরা দু’দুবার নদীর ঘাটে খোঁজ নিয়ে এ্যালাম-এ পাড়ার সব বাড়ি খোজলাম-বৌ বটে বাবা বলিহারি! বেরিয়েচে তিন পহর বেলা থাকতি আর এখন সন্দের অন্ধকার হোলো, এখন ও এল। আর কি বলবো মা, ভাজা ভাজা হয়ে গ্যালাম ও বৌ নিয়ে; আবার কথায় কথায় চোপা কি!

 নিস্তারিণী সামান্য নিচু সুরে অথচ শাশুড়ীকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললে-হ্যাঁ, তোমরা সব গুণের গুণমণি কিনা? তোমাদের কোনো দোষ নেই-থাকতি পারে না।—

 —শুনলে তো মা, শুনলে নিজের কানে? কথা পড়তি তস্ সয় না, আমনি সঙ্গে সঙ্গে চোপা!

 বৌ বললে-বেশ।

 তিলু ধমক দিয়ে বললে-ও কি রে? ছিঃ-শাশুড়ীকে আমন বলতি আছে? সন্দের দেরি নেই। তিলু বাড়ি চলে গেল। বাঁশবনের তলায় অন্ধকার জমেচে, জোনাকী জলচে কালকাসুন্দে গাছের ফাঁকে ফাঁকে।

 এসে ভবানীকে বললে-দিন বদলে যাচ্চে, বুঝলেন? নিস্তারিণীর ব্যাপার দেখে বুঝলাম। কখনো শুনি নি ভদ্দরঘরের বৌ বনের মধ্যে বসে পরপুরুষের সঙ্গে আলাপ করে। আমাদের যখন প্রথম বিয়ে হোলো, আপনার সঙ্গে কথা কওয়ার নিয়ম ছিল না দিনমানে। এ গায়ে এখনো তা নিয়ম নেই। অল্পবয়সী বৌরা দুপুর রাত্তিরি সবাই ঘুমুলি তবে স্বামীর ঘরে যায়-এখনো।

 ভবানী বাঁড়ুয্যে বললেন-আমি বলেছিলাম না তোমাকে, খোকা তার বৌ নিয়ে এই গায়ের রাস্তায় দিনমানে পাশাপাশি বেড়াবে-

২৫৭