পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 তিলু বুঝতে না পারার সুরে বললে-কি কথা?

 —অশ্লীল কথা। যা মুখ দিয়ে বলতে নেই এমনি কথা।

 নিলু বলে উঠলো—আচ্ছা দিদি, তুইই বল্‌। পাঁচালির ছড়ায় সেদিন পঞ্চাননতলায় বারোয়ারীতে বলেনি ‘রসের নাগর’? আমি তাই বলেছি। দোষটা কি হয়েচে শুনি? বরকে বলবো না?

 ভবানী হতাশ হওয়ার সুরে বল্লেন—শোন কথা!

 তিলু ছোটবোনের দিকে চেয়ে বললে—তোর বুদ্ধি-সুদ্ধি কবে হবে নিলু?

 ভবানী বললেন—ও দুই-ই সমান, বিলুও কম নাকি?

 তিলু বললে—না, আপনি রাগ করবেন না। আমি ওদের শাসন করে দিচ্চি। কোথায় বেরুচ্চেন এখন?

 —মাঠের দিকে বেড়াতে যাবো।

 —বেশিক্ষণ থাকবেন না কিন্তু—সন্দের সময় এসে জল খাবেন। আজ বৌদিদি আপনার জন্যে মুগতক্তি করচে—

 —ভুল কথা। মুগতক্তি এখন হয় না। নতুন মুগের সময় হয়, মাঘ মাসে।

 —দেখবেন এখন, হয় কি না। আসবেন সকাল সকাল, আমার মাথার দিব্যি—

 নিলু বললে—আমারও—

 তিলু বললে—যা, তুই যা।


 ভবানী বাড়ির বাইরে এসে যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। শরৎকাল সমাগত, আউশ ধানের ক্ষেত শূন্য পড়ে আছে ফসল কেটে নেওয়ার দরুন। তিৎপল্লার হলদে ফুল ফুটেচে বনে বনে ঝোপের মাথায়। ভবানীর বেশ লাগে এই মুক্ত প্রসারতা। বাড়ির মধ্যে তিনটি স্ত্রীকে নিয়ে প্রাণ ওষ্ঠাগত হতে হয়। তার ওপর পরের বাড়ি। যতই ওরা আদর করুক, স্বাধীনতা নেই—ঠিক সময়ে ফিরে আসতে হবে। কেন রে বাবা!

 ভবানী অপ্রসন্ন মুখে নদীর ধারে এক বটতলায় গিয়ে বসলেন। বিশাল

২৩