পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খোকার মুখে সে কি উল্লাসের হাসি। বাবাকে সে মহা আগ্রহে হাত ধরে এনে একটা পিড়িতে বসিয়ে দিলে। যেটাতে বসিয়ে দিলে সেটা রুটি বেলবার চাকি, ঠিক পিড়ি নয়।

 —বোসো এখেনে। তুমি খাবে?

 —হুঁ।

 —আমি খাবো।

 —বেশ।

 —তুমি খাবে?

 কিন্তু দুর্বাসা শ্যাম গাঙ্গুলী বাইরে থেকে হেঁকে বললেন ঠিক সেই সময়-বলি, দেরি হবে নাকি বাবাজির?

 আর থাকা যায় না। দুর্বাসা ঋষিকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা চলে না। ভবানীকে উঠতে হোলো। খোকা এসে বাবার কাপড় চেপে ধরে বললে-যাস নে, এ বাবা। বোসো, ও বাবা। আমি তাহোলে কাঁদবো।—

 খোকার আগ্রহশীল ছোট্ট দুর্বল হাতের মুঠো থেকে তাড়াতাড়ি কাপড় ছাড়িয়ে নিয়ে ভবানীকে চলে যেতে হোলো। সমস্ত রাস্তা শ্যাম গাঙ্গুলী সমাজপতি বক বক বকতে লাগলেন, ৺চন্দ্র চাটুয্যের চণ্ডীমণ্ডপে কাদের একটি যুবতী মেয়ের গুপ্ত প্রণয়ঘটিত কি বিচার হোতে লাগলো-এসব ভবানী বাঁড়ুয্যের মনের এক কোণেও স্থান পায় নি-তাঁর কেবল মনে হচ্ছিল খোকার চোখের সেই আগ্রহভরা আকুল সপ্রেম দৃষ্টি, তার দুটি ছোটমুঠির বন্ধন অগ্রাহ্য ক’রে তিনি চলে এসেচেন। মনে পড়লো খোকনের আরো ছেলেবেলার কথা। - কোথায় যেন সেদিন তিনি গিয়েছিলেন, সেদিন অনেকক্ষণ খোকাকে দেখেন নি ভবানী বাঁড়ুয্যে। মনে হয়েছিল সন্দেবেলায় হয়তো বাড়ি ফিরে দেখবেন সে ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ সারারাতে আর সে জাগবে না। তাঁর সঙ্গে কথাও বলবে না।

 বাড়ীর মধ্যে ঢুকে দেখলেন সে ঘুমোয় নি। বাবার জন্যে জেগে বসে আছে। ভবানী বাঁড়ুয্যে ঘরে ঢুকতেই সে আনন্দের সুরে বলে উঠল-ও বাবা, আয় না-ছুবি-

২৭২