পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বটগাছটি, এখানে-সেখানে সব জায়গায় ঝুরি নেমে বড় বড় গুঁড়িতে পরিণত হয়েচে। একটা নিভৃত ছায়াভরা শান্তি বটের তলায়। দেশের পাখী এসে জুটেছে গাছের মাথায়; দূরদূরান্তর থেকে পাখিরা যাতায়াতের পথে এখানে আশ্রয় নেয়, যাযাবর শ্যামকূট, হাঁস ও সিল্লির দল। স্থায়ী বাসস্থান বেঁধেচে খোড়ো হাঁস, বক, চিল, দু’চারটি শকুন। ছোট পাখীর ঝাঁক—যেমন শালিক, ছাতারে, দোয়েল, জলপিপি—এ গাছে বাস করে না বা বসেও না।

 ভবানী এ গাছতলায় এর আগে এসেচেন এবং এসব লক্ষ্য করে গিয়েচেন। দু-একটা সন্ধ্যামণির জংলা ফুল ফুটেচে গাছতলায় এখানে-ওখানে। ভবানী এদিক-ওদিক তাকিয়ে গাছতলায় গিয়ে চুপচাপ বসলেন। একটু নির্জন জায়গা চাই। চাষীলোকেরা বড় কৌতুহলী. দেখতে পেলে এখানে এসে উকিঝুঁকি মারবে আর অনবরত প্রশ্ন করবে, তিনি কেন এখানে বসে আছেন। তিনি একা বসে রোজ এ-সময়ে একটু ধ্যান করে থাকেন—তার সন্ন্যাসী-জীবনের বহুদিনের অভ্যাস।

 আজও তিনি ধ্যানে বসলেন। একটা সন্ধ্যামণি ফুলগাছের খুব কাছেই। খানিকটা সময় কেটে গেল। হঠাৎ একটা অপরিচিত ও বিজাতীয় কণ্ঠস্বরে ভবানী চমকে উঠে চোখ খুলে তাকালেন। একজন সাহেব গাছের গুঁড়ির ওদিকে একটা মোটা ঝুরি ধরে দাঁড়িয়ে তার দিক বিস্ময় ও শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।

 সাহেবটি আর কেউ নয়, কোল্‌স্‌ওয়ার্দি গ্র্যাণ্ট—তিনি বটগাছের শোভা দূর থেকে দেখে ভাল করে দেখবার জন্যে কাছে এসে আরও আকৃষ্ট হয়ে গাছের তলায় ঢুকে পড়েন এবং এদিক-ওদিক ঘুরতে গিয়ে হঠাৎ ধ্যানরত ভবানীকে দেখেই থমকে দাঁড়িয়ে বলে ওঠেন, An Indian Yogi!

 সাহেবের টম্‌টম্‌‌ দূরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে; সঙ্গে কেউ নেই। ভজা মুচি সহিস টম্‌টমেই বসে আছে ঘোড়া ধরে।

 কোল্‌স্ওয়ার্দি গ্র্যাণ্ট ভবানীর সামনে এসে আশ্বাসের সুরে বললেন— Oh, I am very sorry to disturb you. Please go on with your

২৪