পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 আগের নালুপাল ছিল সম্পন্ন গৃহস্থ, এখন সে হোলো ধনী মহাজন।

 কিন্তু নালু পালকে দেখে তুমি চিনতে পারবে না। খাটো ন’ হাত ধুতি পরনে, খালি গা, খালি পা। ব্রাহ্মণ দেখলে ঘাড় নুইয়ে দুই হাত জোড় ক’রে প্রণাম ক’রে পায়ের ধুলো নেবে। গলায় তুলসীর মালা, হাতে হরিনামের ঝুলি -নাঃ, নালু পাল যা একজীবনে করলে, অনেকের পক্ষেই তা স্বপ্ন।

 যদি তুমি জিজ্ঞেস করলে–পালমশায়, ভালো সব?

 বিনীত ভাবে হাত জোড় ক’রে নালু পাল বলবে-প্রাতোপেন্নাম হই। আসুন, বসুন। না ঠাকুরমশাই, ব্যবসার অবস্থা বড্ড মন্দা। এসব ঠাটবাট। তুলে দিতি হবে। প্রায় অচল হয়ে এসেচে। চলবে না আর। মুখের দীনভাব দেখলে অনভিজ্ঞ লোকে হয়তো নালু পালের অবস্থার বর্তমান অবনতির জন্যে দুঃখ বোধ করবে। কিন্তু ওটা শুধু বৈষ্ণব-সুলভ দীনতা মাত্র নালু পালের, বাস্তব অবস্থার সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নেই। সায়েরেই বছরে চোদ্দ-পনেরো হাজার টাকা কেনাবেচা হয়। ত্রিশ হাজার টাকা কাপড়ের কারবারের মূলধন।

 নালু পালের একজন অংশীদার আছে, সে হচ্ছে সেই সতীশ কলু। দুজনে একদিন মাথায় মোট নিয়ে হাটে হাটে জিনিস বিক্রী করতো, নালু পাল সুপুরি, সতীশ কলু তেল। তারপর হাতে টাকা জমিয়ে ছোট এক মুদির দোকান করলে নালু পাল। সতীশের পরামর্শে নালু তেঘরা-শেখ হাটি আর বাঁধমুড়া মোকাম থেকে সর্ষে, আলু আর তামাক কিনে এনে দেশে বেচতে শুরু করে। সতীশ এতে শূন্য বখারাদার ছিল, মোকাম সন্ধান করতো। কাঁটায় মাল খরিদ করতে ওস্তাদ ঘুঘু সতীশ কলু। কৃতিত্ব এই, একবার তাকালে বিক্রেতা মহাজন বুঝতে পারবে, হঁ, খদ্দের বটে। সতীশ কলুৱ কৃতিত্ব এই উন্নতির মূলে-নালু পাল গোড়া থেকেই সততার জন্যে নাম কিনেছিল। দুজনের সম্মিলিত অবদানে আজ এই দৃঢ় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠেচে।

 স্বামী বাড়ি ফিরলে তুলসী বললে-হ্যাঁগা, এবার কালীপূজোতে অমন হিম হয়ে বসে আছ কেন?

 —বড় কাজের চাপ পড়েচে বড়বৌ। মোকামে পাঁচশো মণ মাল কেনা

২৭৭