পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তা বলে বোঝাতে পারে না। কিশোর বয়সে ও প্রথম যৌবনে কম কষ্টটা করেছে মামার বাড়িতে? মামীমা একটু বেশী তেল দিত না মাখতে। শখ করে বাবরি চুল রেখেছিল মাথায়, কাঁচা বয়সের শখ। তেল অভাবে চুল রুক্ষ থাকতো। দুটি বেশি ভাত খেলে বলতো, হাতীর খোরাক আর বসে বসে কত যোগাবো? অথচ সে কি বসে বসে ভাত খেয়েচে মামারবাড়ির? দু’ ক্রোশ দূরবর্তী ভাতছালার হাট থেকে সমানে চাল মাথায় করে এনেচে। মামীমা ধানসেদ্ধ শুকনো করবার ভার দিয়েছিল ওকে। রোজ আধ মন বাইশ সের ধান সেদ্ধ করতে হোতো। হাট থেকে আসবার সময় একদিন চাদরের খুঁট থেকে একটা রূপোর দুয়ানি পড়ে হারিয়ে গিয়েছিল। মামীমা তিনদিন ধরে রোজ ভাতের থালা সামনে দিয়ে বলতো-আর ধান নেই, এবার ফুরলো। মামার জমানো গোলার ধান আর ক’দিন খাবা? পথ দ্যাথো এবার। সেদিন ওর চোখ দিয়ে জল পড়েছিল।

 সেই নালু পাল আজ এতগুলি ব্রাহ্মণের লুচি-চিনির পাকা ফলার দিতে পেরেচে!

 ইচ্ছে হয় সে চেঁচিয়ে বলে-তিলু দিদি, খুব দ্যাও, যিনি যা চান দ্যাও-একদিন বড্ড কষ্ট পেয়েচি দুটো খাওয়ার জন্যি।

 ব্রাহ্মণের দল খেয়েদেয়ে যখন বেরিয়ে যাচ্ছিল, তুলসী আবার গিয়ে ঘোমটা দিয়ে দূরে কাঁটালতলায় দাড়ালে। লালমোহন হাত জোড় ক’রে প্রত্যেকের কাছে বললে-ঠাকুরমশাই, পেট ভরলো?

 গ্রামের সকলে নালু পালকে ভালোবাসে। সকলেই তাকে ভালো ভালো কথা বলে গেল। শম্ভু রায় (রাজারাম রায়ের দূরসম্পর্কের ভাইপো, সে কলকাতায় আমুটি কোম্পানীর হৌসে নকলনবিশ) বললে-চলো নালু আমার সঙ্গে সোমবারে কলকাতা, উৎসব হচ্চে সামনের হপ্তাতে-খুব আনন্দ হবে দেখে আসবা-এ গায়ের কেউ তো কিছু দেখলে না-সব কুয়োর ব্যাং-রেলগাড়ি খুলেচে হাওড়া থেকে পেঁড়ো বর্ধমান পজ্জন্ত, দেখে আসবা-

 —রেলগাড়ি জানি। আমার মাল সেদিন এসেচে রেলগাড়িতে ওদিকের

২৮০