পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পেশ্‌কার এসে হাজির হোলো ওর আড়তে। নালু পাল ও সতীশ কলু তটস্থ হয়ে শশব্যস্ত হয়ে ওদের অভ্যর্থনা করলে। তখনি পান-তামাকের ব্যবস্থা হোলো। নীলকুঠির দেওয়ান, মানী লোক, হঠাৎ কারো কাছে যান না। একটু জলযোগের ব্যবস্থা করবার জন্যে সতীশ কলু নবু ময়রার দোকানে ছুটে গেল। কিছুক্ষণ পরে দেওয়ানজী তার আসার কারণ প্রকাশ করলেন, বড় সাহেব কিছু টাকা ধার চান। বেঙ্গল ইণ্ডিগো কন্‌সারন্ মোল্লাহাটির কুঠি ছেড়ে দিচ্ছে, নীলের ব্যবসা মন্দা পড়েছে বলে তারা এ কুঠি রাখতে চায় না। শিপ্‌টন্ সাহেব নিজ সম্পত্তি হিসেবে এ কুঠি রাখতে চান, এর বদলে পনেরো হাজার টাকা দিতে কবে বেঙ্গল ইণ্ডিগো কন্‌সারন্কে। এই কুঠিবাড়ি বন্ধক দিয়ে বড় সাহেব নালু পালের কাছে টাকা চায়।

 নরহরি পেশ্‌কার বললে—কুঠিটা বজায় রাখার এই একমাত্র ভরসা। নইলে চৈত্র মাস থেকে নীলকুঠি উঠে গেল। আমাদের চাকুরি তে চলে গেলই, সায়েৰও চলে যাবে।

 দেওয়ান হরকালী বললেন-বড় সায়েবের খুব ইচ্ছে নিজে কুঠি চালিয়ে একবার দেখবেন। এতকাল এদেশে কাটিয়ে আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না। দেশে কেউ নেইও তো, মেমসায়েব তো মারা গিয়েছেন। একটা মেয়ে আছে, সে এদেশে কখনো আসে নি।

 নালু পাল হাত জোড় ক'রে বললে-এখন কিছু বলতি পারবো না দেওয়ানবাবু। ভেবে দেখতি হবে-তা ছাড়া আমার একার ব্যবসা না, অংশীদারের মত চাই। তিন-চারদিন পরে আপনাকে জানাব।

 দেওয়ান হরকালী সুর বিদায় নিয়ে যাবার সময় বললেন—তিন দিন কেন, পনেরো দিন সময় আপনি নিন পালমশাই। মার্চ মাসে টাকার দরকার হবে-এখনো দেরি আছে-


 তুলসী শুনে বললে—বল কি!

 —আমিও ভাবচি। কিসে থেকে কি হোলো!

২৮৩