পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —টাকা দেবে?

 —আমার খুব অনিচ্ছে নেই। অত বড় কুঠিবাড়ি, দেড়শো বিঘে খাস জমি, ‘বড় বড় কলমের আমের বাগান, ঘোড়া, গাড়ি, মেজ কেদারা, ঝাড়লণ্ঠন সব বন্দক থাকবে। কুঠির নেই-নেই এখনো অনেক আছে। কিন্তু সতে কলুর দ্যাখলাম ইচ্ছে নেই। ও বলে আমরা আড়তদার লোক, হাংগামাতে যাওয়ার দরকার কি? এরপর হয়তো এই নিয়ে মামলা করতি হবে।

 সমস্ত রাত নালু পালের ঘুম হোলো না। বড় সাহেব শিপটন, টম্‌টম্‌ করে যাচ্চে ..কুঠির পাইক লাঠিয়াল ..দব্‌দবা রব্‌রবা...মারো শ্যামাচাঁদ... দাও ঘর জ্বালিয়ে... সে মোল্লাহাটির হাটে পানসুপুরির মোট নিয়ে বিক্রি করতি যাচ্ছে।

 টাকা দিতে বড় ইচ্ছে হয়।


 এই বছরে আর একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে গেল; আফগান যুদ্ধজয়ের উৎসব ছাড়াও।

 মাত্র কয়েক দিনের জ্বরে বড় সাহেব হঠাৎ মারা গেল মার্চ মাসের শেষে।

 সাহেব যে অমন হঠাৎ মারা যাবে তা কেউ কল্পনা করতে পারে নি।

 অসুখের সময় গয়ামেম যেমন সেবা কারেচে অমন দেখা যায় না। রোগের প্রথম অবস্থা থেকেই সে রোগীর কাছে সর্বদা হাজির থাকে। জ্বরের ঝোঁকে শিপ্‌টন্‌, বকে, কি সব গান গায়। গয়া বোঝে না সাহেবের কি সব কিচির মিচির বুলি।

 ওকে বললে-গয়া শুনো

 —কি গা?

 —ব্রাণ্ডি ডাও। ডিটে হইবে টোমায়।

 গয়া ক’দিন রাত জেগেচে। চোখ রাঙা, অসম্বৃত কেশপাশ, অসম্বৃত বসন। সাহেবের লোকলস্কর দেওয়ান আরদালি আমীন সবাই সর্বদা দেখাশুনা করচে তটস্থ হয়ে, কুঠির সেদিন যদিও এখন আর নেই, তবুও এখনো

২৮৪