পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বছর। তিলু অবাক হয়ে বাউটি-শোভিত হাত দুটি মুখে তুলে একমনে গল্প শুনছিল, এমন সময় রান্নাঘরের ভেতর থেকে ঝন্‌ঝন্ করে বাসনপত্র যেন স্থানচ্যুত হবার শব্দ হোলো। নিলু খয়রা মাছের পাত্রটা নামিয়ে রেখে হাত মুঠো করে চিবুকে দিয়ে গল্প শুনছিল, অমনি পাত্র তুলে নিয়ে দৌড় দিলে রান্নাঘরের দিকে। ঘরের মধ্যে গিয়ে তাকে বলতে শোনা গেল—যাঃ যাঃ, বেরো আপদ—

 তিলু ঘাড় উচু করে বললে—হ্যাঁরে নিয়েচে?

 —বড় বেলে মাছটা ভেজি রেখেছি ওবেলা খোকাকে দেবো বলে, নিয়ে গিয়েচে।

 —ধাড়িটা না মেদিটা?

 —ধাড়িটা।

 —ওবেলা ঢুকতি দিবিনে ঘরে, ঝ্যাঁটা মেরে তাড়াবি।

 ভবানী বললেন—সেও কেষ্টর জীব। তোমার আমার না খেলে খাবে কার? খেয়েছে বেশ করেছে। ও নিলু, চলে এসো, গল্প শোনো। আর দু’দিন পরে বেঁচে থাকলে কলের গাড়ি শুধু দেখা নয়, চ'ড়ে শান্তিপুরে রাস দেখে আসতে পারবে।

 নিলু ততক্ষণ আবার এসে বসেছে খালি হাতে। ভবানী গল্প করেন। অনেক কুলি এসেচে, গাঁইতি এসেচে, জঙ্গল কেটে লাইন পাতচে। রেলের পাটি তিনি দেখে এসেচেন। লোহার ইঁটের মত, খুব লম্বা। তাই জুড়ে জুড়ে পাতে।

 তিলু বললে—আমরা দেখতে যাবে বলো।

 —যেও, লাইন পাতা দেখে কি হবে? সামনের বছর থেকে রেল চলবে এদিকে। কোথায় যাবে বলো।

 নিলু বললে-জষ্টি যুগল। দিদিও যাবে।

যুগল দেখিলে জষ্টি মাসে
পতিসহ থাকে স্বর্গবাসে-

 —উঃ, বড্ড স্বামীভক্তি যে দেখচি!

 —আবার হাসি কিসের? খাড়ু পৈঁছে আর নোয়া বজায় থাকুক, তাই

২৮৮