পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খেপী বললে-রাগ করলেন? আপনারে জানি। কিনা, তাই ভয় করে।

 —ভয় কি? যে যা ভাবে ভাববে। তাতে দোষ কি আছে। আমার সঙ্গে মতে না মিললে কি আমি ঝগড়া করবো? আমি এখন উঠি।

 —কিছু ফল খেয়ে যান-

 —না, এখন খাবো না। চলি-

 এই সময়ে দ্বারিক কর্মকার এল, হাতে একটা লাউ। বললে-লাউয়ের সুক্ত বাঁধতে হবে।

 ভবানী বললেন-কি হে দ্বারিক, তুমি খাবে নাকি?

 দ্বারিক বিনীতভাবে বললে -আজ্ঞে তা কখনো খাই? ওঁর হাতে কেন, আমি নিজের মেয়ের হাতে খাই নে। ভাজন্‌ঘাটে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গিইচি, তা বেয়ান বললে, মুগির ডাল লাউ দিয়ে রেঁধিচি, খাবা? আমি বললাম, না। বেয়ান, মাপ করবা। নিজির হাতে রেঁধে খালাম তাদের বান্নাঘরের দাওয়ায়।

 দ্বারিক কর্মকার এ অঞ্চলের মধ্যে ছিপে মাছ মাবার ওস্তাদ। ভবানী বললেন-তুমি তো একজন বড় বর্শেল, মাছ ধরার গল্প করো না শুনি।

 দ্বারিক পুনরায় বিনীতভাবে বললে-জামাইঠাকুর, হবে না কেন? আজি দু’কুড়ি বছর ধরে এ দিগরের বিলি, বাঁওড়ে, নদীতি পুকুরি ছিপ বেয়ে আসচি। কেন বর্শেল হবে না বলুন। এতকাল ধরে যদি একটা লোক একটা কাজে মন দিয়ে নেগে থাকে, তাতে সে কেন পোক্ত হয়ে উঠবে না বলুন।

 খেপী বললে-এতকাল ধৱে ভগবানের পেছনে নেগে থাকলি যে তাঁরে পেতে। মাছ মেরে অমূল্য মানব জন্‌মো বৃথা কাটিযে দিলে কেন?

 দ্বারিক অত্যন্ত অপ্রতিভ ও লজিত হয়ে গেল এ কথা শুনে। এসব কথা সে কখনো ভেবে দেখে নি। আজকাল এই পঁয়ষট্টি বছর বয়সে নতুন ধরনের কথা যেন সবে শুনচে। লাউটা সে নিরুৎসাহভাবে উঠোনের আকন্দগাছের ঝোপটার কাছে নামিয়ে রেখে দিলে। ভবানীর মমতা হোলো ওর অবস্থা দেখে। বললেন-শোন খেপী, দ্বারিকের কথা কি বলো! আমি যে অমন শুরু পেয়েও এসে আবার গৃহী হোলাম, কেন? কেউ বলতে পারে? যে যা

২৯৩