পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করচে করতে দাও। তবে সেটি সে যেন ভালোভাবে সৎভাবে করে। কাউকে না ঠকিয়ে, কারো মনে কষ্ট না দিয়ে। সবাই যদি শালগ্রাম হবে, বাটনা বাটবার নুড়ি কোথা থেকে আসবে তবে?

 খেপী বললে—আমি মুক্‌খুমি সহ্য করতে পারিনে মোটে। দ্বারিক যেন রাগ কোরো না। কোথায় লাউটা? সুক্তুনি একটু দেবানি, মা কালীর পেরসাদ চাক্‌লি জাত যাবে না তোমার।

 ভবানী থাকলে সকলেই একটু অস্বস্তি বোধ করে, কারণ গাঁজাটা চলে না। হাফেজ মণ্ডল এসে আড়চোখে একবার ভাবানীকে চেয়ে দেখে নিলে, ভাবটা এই, জামাইঠাকুর আপদটা আবার কোথা থেকে এসে জুটলো দ্যাখো। একটু ধোঁয়া-টোঁয়া যে টানবো, তার দফা গয়া।

 খেপী বললে—ঐ দেখুন, আপদগুলো এসে জুটলো, শুধু গাঁজা খাবে-

 —তুমি তো পথ দেখাও, নয়তো ওরা সাহস পায়?

 —আমি খাই অবিশ্যি, ওতে মনডা একদিকে নিয়ে যাওয়া যায়।

 এই সময় যেন একটু বৃষ্টি এল। ভবানী উঠতে চাইলেও ওরা উঠতে দিলে না। সবাই মিলে বড় চালাঘরে গিয়ে বসা হোলো। ভবানীর মুখে মহাভারতের শঙ্খ-লিখিতের উপাখ্যান শুনে ওরা বড় মুগ্ধ। শঙ্খ ও লিখিত দুই ভাই, দুইজনেই তপস্বী, ভিন্ন ভিন্ন স্থানে আশ্রম স্থাপন করে বাস করেন। ছোট ভাই লিখিত একদিন দাদার আশ্রমে বেড়াতে গিয়ে দেখেন দাদা আশ্রমে নেই, কোথাও গিয়েছেন। তিনি বসে দাদার আগমনের প্রতীক্ষা করছেন, এমন সময়ে তাঁর নজরে পড়লো, একটা ফলের বৃক্ষের ঘন ডালপালার মধ্যে একটা সুপক্ক ফল দুলছে। মহর্ষি লিখিত সেটা তখুনি পেড়ে মুখে পুরে দিলেন। কিছুক্ষণ পরে দাদা আসতেই লিখিত ফল খাওয়ার কথাটা বললেন তাঁকে। শুনে শঙ্খের মুখ শুকিয়ে গেল। সে কি কথা! তপন্থী হয়ে পরস্বাপহরণ? হোলোই বা দাদার গাছ, তাহোলেও তাঁর নিজের সম্পত্তি তো নয়, একথা ঠিক তো। না বলে পরের দ্রব্য নেওয়া মানেই চুরি করা। সে যত সামান্য জিনিসই হোক না কেন। আর ততপস্বীর পক্ষে তো মহাপাপ। এ দুর্মতি কেন হোলো

২৯৪