পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয়তো তিলুর কাছে গিয়েছিল। অন্য কোথাও বড় একটা সে যায় না।

 এ সব ভবিষ্যতের মেয়ে, অনাগত ভবিষ্যত দিনের অনাগত ভবিষ্যৎ দিনের অলক্তরাগরক্ত চরণধ্বনিতে বেজে উঠেছে, কেউ কেউ শুনতে পায়। আর গ্রাম্য সমাজের পুঞ্জীকৃত অন্ধকারে এইসব সাহসিকা তরুণীর দল অপাংক্তেয়-প্রত্যেক চণ্ডীমণ্ডপে গ্রাম্য বৃদ্ধদের মধ্যে ওদের বিরুদ্ধে ঘোঁট চলচে, জটলা চলচে, কিন্তু ওই আবাহন করে আনচে সেই অনাগত দিনটিকে।

 দূর পশ্চিমাঞ্চলের কথাও মনে পড়লো। এ রকম সাহসী মেয়ে কত দেখেছেন সেখানে, ব্রজধামে, বিঠুরে, বাল্মীকি-তপোবনে। সেখানে কেলিকদম্বের চিরহরিৎপল্পবদলের সঙ্গে মিশে আছে যেন পীতাভ নিম্বপত্রের বর্ণমাধুরী, গাঢ় নীল কণ্টকদ্রুমযুক্ত লাল রংয়ের ফুলে ফুলে ঢাকা নিবিড় অতিমুক্তলতাঝোপের তলে ময়ূরেরা দল বেঁধে নৃত্য করচে, কালিন্দীর জলরাশিতে গাছের ছায়ায় ঘাগরাপরা সুঠামদেহা তরুণী ব্রজরমণীর দল জলকেলি-নিরতা। মেয়েরা উঠবে কবে বাংলা দেশের? নিস্তারিণীর মত শক্তিমতী কন্যা, বধূ কবে জন্মাবে বাংলার ঘরে ঘরে?


 তিলু বললে রাত্রে-হ্যাঁগো, নিস্তারিণী আবার যে গোলমান বাধালে?

 —কি?

 —ও আবার কার সঙ্গে যেন কি রকম বাধাচ্চে-

 —গোবিন্দ?

 —উঁহু। সে সব নয়, ওর সঙ্গে দেখা করতি আসে মাঝে মাঝে, ওর বাপের বাড়ির লোক।

 —কিছু হবে না, ভয় নেই। বললে কে এসব কথা?

 —ও-ই বলছিল। সঙ্গে অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত বসে নিলু আর আমার সঙ্গে সেই সব গল্প করছিল। খোলামেলা সবই বলে, ঢাক ঢাক নেই। আমার ভালো লাগে। তবে আগে ছিল ছিল, এখন বয়েস হচ্ছে। আমি বকিচি আজ।

 —না, বেশি বোকো না। যে যা বোঝে করুক।

 —আবার কি জানেন, বড্ড ভালোবাসে আপনাকে-

২৯৭