পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 নীলমণির মুখখানা যেন এক জটিল সমস্যার সমাধানে চিন্তাকুল হয়ে পড়লো। তাকে নিরুপদ্রব চিন্তার অবকাশ দেওয়ার জন্যে দুজনে চুপ করে রইল, মামা ও ভাগ্নে।

 অল্পক্ষণ পরে নীলমণির মুখ উজ্জল দেখালো। বললেন-হয়েচে। যাবে কোথায়?

 —কি খুড়োমশাই?

 —কিছু বলবো না। খোকার কপালে ঠেকিয়ে দুটো মাসকলাই আমারে দাও দিকি?

 হারু দৌড়ে গিয়ে কিছুক্ষণ পরে দুটি মাসকলাইয়ের দানা নিয়ে এসে নীলমণির তাতে দিল। সে-দুটি হাতে নিয়ে নীলমণি প্রস্থানোস্থ্যত হলেন। হারু ও নারাণ। ডেকে বললে-সে কি! চললেন যে?

 —এখন যাই। বুধবার অষ্টোত্তরী দশা। ষড়ঙ্গ হোম করতি হবে এই মাসকলাই দিয়ে। নিঃশ্বেস ফ্যালবার সময় নেই।

 —খুড়োমশাই, দাঁড়ান না। দু’কাঠা সোনামুগ নিয়ে যাবেন না বাড়ির জন্যি?”

 —সময় নেই বাবা। এখন হবে না। কাল সকালে আগে মাদুলি নিয়ে আসি, তারপর অন্য কথা।

 পথে নেমে নীলমণি সমাদ্দার হনহন ক’রে পথ চলতে লাগলেন। মাছ গেঁথে ফেলেচেন; এই করেই তিনি সংসার চালিয়ে এসেচেন। আজ এ-গাঁয়ে, কাল ওগাঁয়ে। তবে সব জলে ডাল সমান গলে না। গাঁয়ের ধারের রাস্তায় দেখলেন। তাদের গ্রামের ক্ষেত্র ঘোষ এক ঝুড়ি বেগুন মাথায় নিয়ে বেগুনের ক্ষেত থেকে ফিরচে। রাস্তাতে তাঁকে পেয়ে ক্ষেত্র বেগুনের বোঝা নামিয়ে গামছা ঘুরিয়ে বাতাস খেতে খেতে বললে-বড্ড খরগোশের উপদ্রব হয়েচে-বেগুনে জালি যদি পড়েচে তবে দ্যাখো আর নেই। দু'বিঘে জমিতে মোট এই দশ গণ্ডা বেগুন। এ রকম হলি কি করে চলে! একটা কিছু করে দ্যান দিনি-আপনাদের কাছে যাবো ভেবেলাম।

 নীলমণি বললেন-তার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। একটা হত্তুক নিয়ে আমার

৩০১