পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বাড়ি যাবা আজ রাত্তির দু’দণ্ডর সময়। আজ অমাবস্যে, ভালোই হলো।

 —বেশ যাবানি। হ্যাদে, দুটো বেগুন নিয়ে যাবা?

 —তুমি যখন যাবা, তখন নিয়ে যেও। বেগুন আর আমি বইতি পারবো না।

 বাড়ির ভেতরে ঢুকবার আগে কাদের গলার শব্দ পেলেন বাড়ির মধ্যে। কে কথা বলে? উঁহু, বাড়ির মধ্যে কেউ তো যাবে না।

 বাড়ি ঢুকতেই ওঁর পুত্রবধূ ছুটে এল দোরের কাছে। বললে-বাবা-

 —কি? বাড়িতি কারা কথা বলচে বৌমা?

 —চুপ, চুপ! সরোজিনী পিসি এসেচে ভাঁড়ারকোলা থেকে তার জামাই আর মেয়ে নিয়ে। সঙ্গে দুটো ছোট নাতনী। মা বলে দিলেন চাল বাড়ন্ত যা হয় করুন।

 —আচ্ছা, বলগে সব ঠিক হয়ে যাচ্চে। ওদের একটু জলপান দেওয়া হয়েছে?

 —কি দিয়ে জলপান দেওয়া হবে? কি আছে ঘরে?

 তাই তো! আচ্ছা, দেখি আমি।

 নীলমণি সমাদ্দার বাড়ির বাইরের আমতলায় এসে অধীর ভাবে পায়চারি করতে লাগলেন। কি করা যাহ এখন? সরোজিনীরও (তাঁর মাসতুতো বোন) কি আর আসবার সময় ছিল না। আর আসার দরকারই কি রে বাপু? দুটো হাত বেরুবে! যত সব আপদ। কখনো একবার উদ্দেশ উদ্নদেশ নেয় না একটা লোক পাঠিয়ে-আজ মায়া একেবারে উথলে উঠলো।

 একটু পরেই ক্ষেত্র ঘোষ এসে হাজির হলো। তার হাতে গণ্ডা পাঁচেক বেগুন দড়িতে ঝোলানো, একছড়া পাকা কলা আর এক ঘটি খেজুরের গুড়। তাঁর হাতে সেগুলো নিয়ে ক্ষেত্র বললে-মোর নিজির গাছে গুড়। বড় ছেলে জ্বাল দিয়ে তৈরি করেচে। সেবা করবেন। আর সেই দুটো হত্তুকি। বলেলেন আনতি। তাও এনিচি।

 —তা তো হোলো, আপাতোক ক্ষেত্তোর, কাঠাদুই চাল বড্ড দরকার যে। বাড়িতি কুটুম্ব এসে পড়েচেন অথচ আমার ছেলে বাড়ি নেই, কাল

৩০২