পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসবার সময় চাল কিনে আনবে দু মণ কথা আছে। এখন কি করি?

 —তার আর কি? মুই এখনি এনে দিচ্চি।

 চালের ব্যবস্থা হয়ে গেল। ক্ষেত্র ঘোষ চাষী গৃহস্থ, তার সংসারে কোনো জিনিসের অভাব নেই। তখুনি সে দু’কাঠা চাল নিয়ে এসে পৌছে দিলে ও নীলমণি সমাদ্দারের হাতে হত্তুকি দুটোও দিলে। নীলমণি হত্তুকি নিয়ে ও চাল নিয়ে বাড়ির মধ্যে ঢুকলেন। বাইরে আসতে আধঘণ্টা দেরি হয়ে গেল। ফিরে এসে সেই হত্তুকি দুটো ক্ষেত্র ঘোষের হাতে দিয়ে বললেন- যাও, এই হত্তুকি দুটো বেগুন ক্ষেতের পূবদিকের বেড়ার গায়ে কালো সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে দেবা। ব্যস্! মন্তর দিয়ে শোধন করে দেলাম। খরগোশের বাবা আসবে না।

 পরদিন সকালে কানসোনা গেলেন। একটি পুরোনো মাদুলী পুত্রবধূ খুঁজেপেতে কোথা থেকে দিয়েচে, উনি সেটা জিউলি গাছের আঠা আর ধুলো দিয়ে ভর্তি করে নিয়েচেন। একটু সিঁদুর চেয়ে নিয়েচেন বাড়ি থেকে। পথে একুটা বেলগাছ থেকে বেলপাতা পেড়ে সিঁদুর মাখালেন বেশ করে।

 হারু ও নারাণ উদ্বিগ্ন ভাবে তারই অপেক্ষায় আছে। হারুর তো রাত্রে ভালো ঘুম হয় নি বললে।

 নারাণ সর্দার বললে-তবু তো বাড়ির মধ্যি বলতি বারণ করেলাম। মেয়ে মানুষ সব, কেঁদেকেটে অনথ্থ বাধাবে।

 নীলমণি সমাদ্দার সিঁদুরমাখানো বেলপাতা আর মাদুলী ওর হাতে দিয়ে বললেন-তুমি গিয়ে হোলে খোকার দাদু। তুমি গিয়ে তার গলায় মাদুলী পরিয়ে দেবা আর এই বেলপাতা ছেঁচে রস খাইয়ে দেবা, কাল সারারাত জেগে ষড়ঙ্গ হোম করি নি? বলি, না, ঘুম অনেক ঘুমোবো: হারু আমার ছেলের মত। তার উপকার আগে করি বড্ড শক্ত কাজ বাবা। এখন নিয়ে যাও, যমে ছোঁবে না। আমার নিজেরও একটা দুর্ভাবনা গেল। বাবাঃ-

 এরপর কি হলো তা অনুমান করা শক্ত নয়। হারুর কৃষাণ গুপে বাগ্‌দি এক ধামা আউশ চাল আর দু’কাঠা শোনা মুগ মাথায় করে বয়ে দিয়ে এল

৩০৩