পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 প্রসন্ন চক্কত্তি কতকটা যেন আপন মনেই বললে-সায়েব-টায়েব কি জানো, ওৱা হাজার হোক ভিন্‌দেশের-আমার সুখদুক্‌খু ওরা কি বা বোঝবে? তোমারও ভুল, কেন কিছু চাইলে না। সেই সময়ডা? তুমি তো সব সময় শিওরে বসে থাকতে-কিছু হাত ক’রে নিতি হয়।

 গয়ামেম চুপ করে রইল, বোধ হোল ওর চোখের জল চিক চিক করচে।

 প্রসন্ন চক্কত্তি ক্ষুব্ধ কণ্ঠেই বললে-নাঃ, তোমার মত নির্বোধ মেয়ে গয়া আজকালকারের দিনি-ঝাটা মারোঃ -একথা বলবার, এবং এত ঝাঁজের সঙ্গে বলবার হেতুও হচ্চে গায়ামেমের ওপর প্রসন্ন চক্কত্তির আন্তরিক দম। গয়ার চেয়ে সেটুকু কেউ বেশি বোঝে না, চুপ করে থাকা ছাড়া তার আর কি করবার ছিল?

 এমন সময় ভগীরথ বাগ্‌দীর মা কোথা থেকে উঠোনে পা দিয়ে বললে-আমীনবাবু না? এসো বোসো। আপনার কথা আমি সব শুনলাম দাঁড়িয়ে। ঠিক কথা বলেচ গয়ারে দু’বেলা বলি, বড় সায়েব তো তোরে মেম বানিয়ে দিয়ে গেল, সবাই বললে গয়ামেম-মেমের মতো সম্পত্তি কি দিয়ে গেল তোরে? মাডা মরে গেল, ঘরে দ্বিতীয় মানুষ নেই-হাতে একটা কানাকড়ি নেই, কুঠির সেই জমিটুকু ভরসা। আর বছর দুটো ধান হয়েচে, তবে এখন খেয়ে বাঁচছে, নয়তো উপোস করতি হোতো না আজ? ইদিকি বাগদিদের সমাজে তুই অচল। তোরে নিয়ে কেউ খাবে না। তুই এখুন যাবি কোথায়? ছেলেবেলায় কোলেপিঠে করিচি তোদের, কষ্ট হয়। মা নেই আর তোরে বলবে কে? সে মাগী সুদ্দু মনের দুঃখি মরে গেল। আমারে বলতো, দিদি, মেয়েডার যদি একটু জ্ঞানগাম্যি থাকতো, তবে মোদের ঘরে আজ ও তো রাজরাণী। তা না শুধু হাতে ফিরে আলেন নীলকুঠি থেকে-

 গয়া যুগপৎ খোঁচা খেয়ে একটু মরীয়া হয়েও উঠলো। বললে, আমি খাই না। খাই তাতে তোমাদের কি? বেশ করিচি আমি, যা ভালো বুঝিচি করিচি-

 ভগীরথের মা মুখ ঘুরিয়ে চলে যেতে উদ্যত হোলো, যাবার সময়ে বললে-মনডা পোড়ে, তাই বলি। তুই হলি চেরকালের একগুঁয়ে আপদ, তোরে

৩০৫