—এখানে সায়েবরা বসে খেতো, মা।
—এত বড় বড় ঝাড়লণ্ঠন কেন?
—এখানে ওদের নাচের সময় আলো জ্বলতো।
—এটা কি?
—ওটা কাঁচের মগ, সায়েবরা জল খেতো। এই দ্যাখো এরে বলে ডিক্যাণ্টার, মদ খেতো ওরা।
তুলসী ছেলেমেয়েদের ডেকে বললে—ছুঁস নে ওসব। ওদিকি যাস্ নে, সন্দে বেলা নাইতি হবে—ইদিকি সরে আয়।
কুঠির অনেক চাকরবাকর জবাব হয়ে গিয়েছে, সামান্য কিছু পাইক-পেয়াদা আছে এই মাত্র। লাঠিয়ালের দল বহুদিন আগে অন্তর্হিত। ওদিকের বাগানগুলো লতাজঙ্গলে নিবিড় ও দুষ্প্রবেশ্য। দিনমানেও সাপের ভয়ে কেউ ঢেকে না। সেদিন একটা গোখুরা সাপ মারা পড়েছিল কুঠির পশ্চিম দিকের হাতার ঘন ঝোপ-জঙ্গলের মধ্যে।
পুরানো চাকর-বাকরদের মধ্যে আছে কেবল কুঠির বহু পুরনো রাঁধুনী ঠাকুর বংশীবদন মুখূয্যে—দেওয়ানজি ও অন্যান্য কর্মচারীর ভাত-রাঁধে।
ময়নার মেয়ে শিবি বললে—ও দাদু, ও দেওয়ানদাদু, সায়েবদের নাকি নাইবার ঘর ছিল? আমি দেখবো—
তখন দেওয়ান হাকালী সুর নিজে সঙ্গে ক’রে ওদের সকলকে নিয়ে গেলেন বড় গোসলখানায়। সেখানে একটা বড় টব দেখে তত সকলে অবাক। ময়নার মেয়ের ইচ্ছে ছিল এই টবে সে একবার নেমে দেখবে কি ক’রে সাহেবরা নাইতো—মুখ ফুটে কথাটা সে বলতে পারলে না। অনেকক্ষণ ধরে ওরা আসবাবপত্তর দেখলে, হাতে করে নাড়লে, টিপে টিপে দেখলে।
সাহেবরা এত জিনিস নিয়ে কি করতো?
বেলা পড়লে ওরা যখন চলে এসে গাড়িতে উঠলো, কুঠির কর্মচারীয়া সসম্ভ্রমে গাড়ি পর্যন্ত এসে ওদের এগিয়ে দিয়ে গেল।