পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —সায়েবকে দিয়ে তোমার ছবি আঁকাবো। ঢাকাই শাড়ীখানা পরে যেও পারবে?

 —ও মা!

 —কেন কি হয়েচে?

 —সে কি হয়? দিনমানে আপনার সঙ্গে কি করে বেরুবো? এই দেখুন আপনার সামনে দিনমানে বার হই বলে কত নিন্দে করচে লোকে। গায়ে সেই পাত্তির ছাড়া দেখা করার নিয়ম নেই। আমাকে বেরুতে হয় বাধ্য হয়ে, বৌদিদি পেরে ওঠেন না একা সবদিক তাংড়াতে।

 —শোনো। ফন্দি করতে হবে। আমাকে যেতে হবে বিকেলে। আজ যে সময় গিয়েছিলুম সে সময়। তুমি নদীর ঘাটে গা ধুতে যেও ঘড়া গামছা নিয়ে। ওখান থেকে নিয়ে যাবো, কেউ টের পাবে না। লক্ষ্মীটি তিলু, আমার বড্ড ইচ্ছে।

 —আপনার আজগুবী ইচ্ছে। ওসব চলে কখনো সমাজে? আপনি সন্নাসি হয়ে দেশ-বিদেশ বেড়িয়েচেন বলে সমাজের কোনো খবর তো রাখেন না। আমার যা ইচ্ছে করবার জো নেই-

 শেষ পর্যন্ত কিন্তু তিলুকে যেতে হোল। স্বামীর মনে ব্যথা দেওয়ার কষ্ট সে সইতে পারবে না। ঢাকাই শাড়ি পরে ঘাড়া নিয়ে ঘাটের পথ আলো করে যাবার সময় তাকে কেউ দেখেনি, কেবল বাদ বোষ্টমের বৌ ছাড়া।

 বোষ্টম-বৌ বললে- ও দিদিমণি, এ কি, এমন সেজে গুজে কোথায়? - রূপে যে ঝলক তুলেচো?

 —যাঃ, ঘাটে গা ধোবো। শাড়িখানা কাচবো। তাই-

 তিলুর বুকের মধ্যে দুরদুর করছিল। অপরাধীর মত মিথ্যা কৈফিয়ৎটা খাড়া করলে। ভাগ্যিস যে বোষ্টম-বৌ দাঁড়ালো না, চলে গেল। আর ভাগ্যিাস, ঘাটে শেষবেলায় কেউ ছিল না।

 গ্র্যাণ্ট সাহেব দূর থেকে তিলুকে দেখে তাড়াতাড়ি টুপি খুলে সামনে এসে সম্ভ্রমের সুরে বললেন-Oh, she is a queenly beauty Oh! I am

২৯