পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

শিশুরূপে পুনঃ করি স্তনপান
এ সব নিমিত্ত কারণ আমার—

 —কার গান? বাঃ—

 —এও এক নতুন কবির। নামটা বলতে পারলুম না। গোড়াটা হচ্চে—

আমাতে যে আমি সকলে সে আমি
আমি সে সকল সকলই আমার।

 রামকানাই কবিরাজ অতি চমৎকার শ্রোতা। খোকাও তাই। খোকা কেমন এক প্রকার বিস্ময়-মিশ্রিত শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বসে আছে চুপটি ক’রে। রামকানাই উৎসাহের সুরে বললেন—বেশ গান। তবে বড্ড উঁচু। অদ্বৈত বেদান্ত। ও সব সাধারণের জন্যে নয়।

 —আপনি যা বলেন। তবে সত্যের উঁচু নিচু নেই। এ সব গুরুতত্ত্ব। আমার গুরু বলতেন—অদ্বৈতবাদী হওয়া অত সহজ নয়। প্রকৃত অদ্বৈতবাদী জীবের আনন্দকে নিজের আনন্দ বলে ভাববে। জীবের দুঃখ নিজের দুঃখ বলে ভাববে। জীবের সেবায় ভোর হয়ে যাবে। সকলের দেহই তার দেহ, সকলের আত্মাই তার আত্মা। আপন পর কিছু থাকে না সে অবস্থায়। নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারে জীবের পায়ে এতটুকু কাঁটা তুলতে। তার কাছে জাগ্রত দশায় ‘অতো মম জগৎ সর্বং’ জগতের সবই আমার, সবই আমি—আবার সমাধি অবস্থায় ‘অথবা ন চ কিঞ্চন’ কিছুই আমার নয়। কিছুই নেই, এক আমিই আছি। জগৎ তখন নেই। বুঝলেন কবিরাজ মশাই?

 —বড্ড উঁচু কথা। কিন্তু বড্ড ভালো কথা। হজম করা শক্ত আমার পক্ষি। বড়ি বেটে রোগ সারাই, আমি ও বেদান্ত-টেদান্ত কি করবো বলুন? সে মস্তিষ্ক কি আছে? তবে বড়ো ভালো লাগে। আপনি আসেন এ গরীরের কুঁড়েতে, কত যে আনন্দ স্থান এসে সে মুখি আর কি বলব আপনারে? দাঁড়ান, খোকারে কি এট্টু, খেতি দিই! বড় চমৎকার হোলো আজ।

 —এই বেশ কথা হচ্চে, আবার খাওয়া কেন? উঠলেন কেন?

 —একটুখানি খেতি দিই ওরে! ছানা দিয়ে গিয়েছিল একটা রুগী। তাই

৩২৯