পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

গণেশপুরে। ওর দূর-সম্পর্কের বোনের নাম নীরদা, নীরি বাগ্‌দিনী বলে গ্রামে পরিচিতা। তার অবস্থা ভালো না, আজ সন্ধ্যাবেলা গয়া এসে পড়াতে এবং রাত্রে থাকবে বলাতে নীরি একটু বিপদে পড়ে গিয়েছিল। কি খাওয়ায়? এক সময়ে এই অঞ্চলের নামকরা লোক ছিল গয়ামেম। খেয়েচেও অনেক। তাকে যা-তা দিয়ে ভাত দেওয়া যায়? কুচো চিংড়ি দিয়ে ঝিঙের ঝোল আর রাঙা আউশ চালের ভাত তাই দিতে হোলো। তারপর একটা মাদুর পেতে একখানা কাঁথা দিলে ওকে শোওয়ার জন্যে।

 গয়ার শুয়ে শুয়ে ঘুম এল না।

 ওই খোকার মুখখানা কেবলই মনে পড়ে। অমন যদি একটা খোকা থাকতো তার?

 আজ যেন সব ফাঁকা, সব ফুরিয়ে গিয়েচে, এ ভাবটা তার মনে আসতে না যদি একটা অবলম্বন থাকতো জীবনের। কি আঁকড়ে সে থাকে?

 আজ ক’বছর বড় সাহেব মারা গিয়েচে, নীলকুঠি উঠে গিয়ে নালু পালের জমিদারী কাছারী হয়েচে। এই ক’বছরেই গয়ামেম নিঃস্ব হয়ে গিয়েচে। বড় সাহেব অনেক গহনা দিয়েছিল, মায়ের অসুখের সময় কিছু গিয়েছে, বাকি যা ছিল, এতদিন বেচে বন্ধক দিয়ে চলচে। সামান্যই অবশিষ্ট আছে।

 পুরনো দিনগুলোর কথা যেন স্বপ্ন হয়ে গিয়েচে। অথচ খুব বেশি দিনের কথাও তো নয়। এই তো সেদিনের। ক’বছর আর হোলো কুঠি উঠে গিয়েচে! ক’বছরই বা সাহেব মারা গিয়েচে।

 এ কঠিন সংসারে কেউ যে বড় একটা কাউকে দেখে না, তা এতদিনে ভালোই বুঝতে পেরেচে সে। আপনার লোক ছিল যে ক’জন সব চলে গিয়েচে।

 নীরি এসে কাছে বসলো। দোক্তাপান খেয়ে এসেচে, কড়া দোক্তাপাতার গন্ধ মুখে। ওসব সহ্য করতে পারে না গয়া। ওর গা যেন কেমন করে উঠলো।

 —ও গয়া দিদি—

 —কি রে?

৩৩৩