পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাঁদের কথা মনে পড়ে।

 পাশের বাড়ির শরৎ বাঁড়ুয্যের বৌ হেমলতা পান চিবুতে চিবুতে এসে বললে—কি হচ্চে বৌদিদি? তেঁতুল কুটচো?

 তিলু বললে—এ আর কখানা তেঁতুল! এখনো দু’ঝুড়ি ঘরে রয়েছে। তালপাতার চ্যাটাইখানা টেনে বোসো।

 —বসবো না, জানতি এয়েলাম আজ কি তিয়োদশী? বেগুন খেতি আছে?

 —খুব আছে। দোয়াদশী পুরো! রাত দু’পহরে ছাড়বে। তোমার দাদা বলছিলেন।

 —দাদা বাড়ি?

 —না, কোথায় বেরিয়েচেন। দাদা কেমন আছেন?

 —ভালো আছেন। বুড়োমানুষের আর ভালো-মন্দ! কাশি আর জ্বরডা সেরেচে। টুলু কোথায়?

 —এখনো পাঠশালা থেকে ফেরে নি বৌদি।

 —অনেক তেঁতুল কুটচিস্‌ তোরা। আমাদের এ বছর দুটো গাছের তেঁতুল পেড়ে ন দেবা ন ধম্মা। মুড়ি মুড়ি পোকা তেঁতুলির মধ্যি। দুটো কোটা তেঁতুল দিস্‌ সেই শ্রাবণ মাসে অম্বলতা খাবার জন্যি। খয়রা মাছ দিয়ে অম্বল খেতি তোমার দাদা বড্ড ভালোবাসেন।

 বেলা পড়ে এসেচে। কোকিল ডাকচে বাঁশঝাড়ের মগডালে। কোথা থেকে শুকনো কুলের আচারের গন্ধ আসচে। কামরাঙা গাছের তলায় নলে নাপিতদের দুটো হেলে গরু চরে বেড়াচ্চে। ওপাড়ার সতে চৌধুরীর পুত্রবধূ বিরাজমোহিনী গামছা নিয়ে নদীতে গা ধুতে গেল সামনের রাস্তা দিয়ে।

 নিলু ডেকে বললে—ও বিরাজ, বিরাজ—

 বিরাজমোহিনী নথ বাঁ হাতে ধরে ওদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে—কি?

 —দাঁড়া ভাই।

 —যাবে ছোড়দি?

 —যাবো।

৩৪০