ছ’ জোড়া লাঙল। তার ভাই নবু গাজি তেজারতি কারবারে বেশ ফেঁপে উঠেচে আজকাল। কম পক্ষেও একশো বিঘে আউশ ধানের চাষ হয় দুই ভায়ের জোতে। গ্রামের সব লোকে ওদের সমীহ করে চলে, এরাও বিপদে-আপদে সব সময় বুক দিয়ে পড়ে।
নবু গাজি আজ ছোট সাহেবের কাছে এসে নালিশ করেচে। তাই বোধ হয় ছোট সাহেব ডেকেচেন। কি জানি। রাজারাম ভয় খান না। নবু গাজি কি করতে পারে করুক।
ছোট সাহেব অনেকদিন এদেশে থেকে এদেশের গ্রাম্যলোকের মত বাংলা বলতে পারে। রাজারামকে ডেকে বললে-কি বলছিল নবু গাজি, ও রাজারাম!
—কি বলুন হুজুৱ-
—ওর তামাকের জমিতে নাকি দাগ মেরে এসেচ।
— না মারলি ও গাঁ জব্দ রাখা যাবে না হুজুর।
—ও বলচে। ওদের পীরির দরগার সামনের জমিও নিয়েচ?
—মিথ্যে কথা হুজুর। আপনি ডাকান ওকে।
নবু গাজি বেশ জোয়ান মর্দ লোক, ঠাণ্ডী প্রকৃতির লোকও সে নিতান্ত নয়। কিন্তু ছোট সাহেব ও দেওয়ানজির সামনে সে নিরীহের মত এসে দাড়ালো। নীলকুঠির চতুঃসীমার মধ্যে দাড়িয়ে মাথা তুলে কথা বলবার সাধ্য নেই কোনো রায়তের।
ছোট সাহেব বললে,—কি নবু গাজি, এবার গুড়-পাটালি করেছিলে?
নবু গাজি বিনম্রমুরে বললে- না সাহেব, মোরা এবার গাছ ঝুড়িনি এখনো।
—পাটালি চলি খাতি দেব না?
—আপনাদের দেবো না তো কাদের দেবো বলুন।
—দেবা ঠিক?
—ঠিক সাহেব।
—রাজারাম, তুমি এদের দরগাতলার জমিতে দাগ মেৱেচ?
—না। হুজুর। জমির নাম দরগাতলার জমি, এই পর্যন্ত। পুরানো খাতাপত্রে