পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খুব সাহসের কাজ ক’রে বসলো নিস্তারিণী। যা কখনো কেউ গাঁয়ে করে না, মেয়েমানুষ হয়ে। বললে—ঠাকুরজামাই ভালো আছেন, বড়দি?

 পুরুষের কথা একা এভাবে জিগ্যেস করা বেনিয়ম। তবে নিস্তারিণীকে সবাই জানে। ওর কাছ থেকে অদ্ভুত কিছু আসাটা সকলের গা-সওয়া হয়ে গিয়েচে।


 পূজো প্রায় এসে গেল। ফণি চক্কেত্তির চণ্ডীমণ্ডপে বসে গ্রামস্থ সজ্জনগণের মজলিস চলচে। তামাকের ধোঁয়ায় অন্ধকার হবার উপক্রম হয়েচে চণ্ডীমণ্ডপের দাওয়া। ব্রাহ্মণদের জন্যে একদিকে মাদুর পাতা, অন্য জাতির জন্যে অপর দিকে খেজুরের চ্যাটাই পাতা। মাঝখান দিয়ে যাবার রাস্তা।

 নীলমণি সমাদ্দার বললেন—কালে কালে কি হেলো হে!

 ফণি চকত্তি বললেন—ও সব হোলো হঠাৎ-বড়লোকের কাণ্ড। তুমি আমি করবোডা কি? তোমার ভালো না লাগে, সেখানে যাবা না। মিটে গেল।

 শ্যামলাল মুখুয্যে বললেন—তুমি যাবা না, আবাইপুরের বামুনেরা আসবে এখন। তখন কোথায় থাকবে মানডা?

 —কেন, কি রকম শুন্‌লে?

 —গাঁয়ের ব্রাহ্মণ সব নেমতন্ন করবে এবার ওর বাড়ি দুর্গোৎসবে।

 —স্পদ্ধাডা বেড়ে গিয়েচে ব্যাটার। ব্যাটা হঠাৎ-বড়লোক কিনা।

 লালমোহন পাল গ্রামের কোনো লোকের কোনো সমালোচনা না মেনে মহাধুমধামে চণ্ডীমণ্ডপে দুর্গাপ্রতিমা তুললে। এবার অনেক দুর্গাপূজা এ গ্রামে ও পাশের সব গ্রামগুলিতে। প্রতি বছর যেমন হয়, গ্রামের গরীব দুঃখীরা পেটভরে নারকোলনাড়ু, সরু ধানের চিঁড়ে ও মুড়কি খায়। নেমতন্ন ক’বাড়ীতে খাবে? সুক্তনি, কচুরশাক, ডুমুরের ডালনা, সোনামুগের ডাল, মাছ ও মাংস, দই, রসকরা সব বাড়িতেই। লালমোহন পালের নিমন্ত্রণ এ গাঁয়ের কোনো ব্রাহ্মণ নেন নি। এ পর্যন্ত নালু পাল ব্রাহ্মণভোজন করিয়ে এসেচে পরের বাড়িতে টাকা দিয়ে…কিন্তু তার নিজের বাড়িতেই ব্রাহ্মণভোজন হবে, এতে সমাজপতিদের মত হোলো না। নালু পাল হাত জোড় ক’রে

৩৪৬