পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —আমাদের পাঁচ টাকা করে দিতে হবে, খাওয়ার আগে কিন্তু। এর কম হবে না।

 —তাই দেবো। তবে কম্‌সে কম একশো ব্রাহ্মণ এনে হাজির করতি হবে। তার কম হলি আপনাদের মান রাখতি পারবো না।

 রামহরি চক্রবর্তী মাথার মাদুলিসুদ্ধ টিকিটা দুলিয়ে বললে—আলবৎ এনে দেবো। আমার নিজের বাড়িতিই তো ভাগ্নে, ভাগ্নীজামাই, তিন খুড়তুতো ভাই, আমার নিজের চার ছেলে, দুই ছোট মেয়ে—তারা সবাই আসবে। সাতকড়ি ভায়ারও শত্তুরের মুখি ছাই দিয়ে পাঁচটি, তারাও আসবে। একশোর অর্ধেক তো এখেনেই হয়ে গেল। গেল কিনা?


 ক্ষমতা আছে রামহরি চক্রবর্তীর। ব্রাহ্মণভোজনের দিন দলে দলে ব্রাহ্মণ আসতে লাগলো। ছোট ছোট ছেলেমেয়ের হাত ধরে। বড় উঠোনে সামিয়ানার তলায় সকলের জায়গা ধরলো না। “দীয়তাং ভূজ্যতাং’’ ব্যাপার চললো। গাওয়া ঘিয়ে ভাজা লুচি আর চিনি এক এক ব্রাহ্মণে যা টানলে! দেখবার মত হোলো দৃশ্যটা। কখনো এ অঞ্চলে এত বৃহৎ ও এত উচ্চশ্রেণীর ভোজ কেউ দেন নি। যে যত পারে পেট ভরে গরম লুচি, মালপুয়া, চিনি ও নারকোলের রসকরা দেওয়া হোলো—তার সঙ্গে ছিল বৈকুণ্ঠপুরের সোনা গোয়ালিনীর উৎকৃষ্ট শুকো দই, এদেশেরমধ্যে নামডাকী জিনিস। ব্রাহ্মণেরা ধন্য ধন্য করতে লাগলো খেতে খেতেই। কে একজন বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ বললে—বাবা নালু, পড়াই ছিল কুলীনকুলসর্বস্ব নাটকে—

ঘিয়ে ভাজা তপ্ত লুচি, দু’চারি আদার কুচি
কচুরি তাহাতে খান দুই—

খাই নি কখনো। কে খাওয়াচ্চে এ গরীব অঞ্চলে? তা আজ বাবা তোমার বাড়ী এসে খেয়ে—

 সকলে সমস্বরে বলে উঠলো—যা বললেন, দাদামশাই। যা বললেন—

 দক্ষিণা নিয়ে ও ছাদার মালসা নিয়ে ব্রাহ্মণের দল চলে গেলে দালাল রামহরি চক্রবর্তী নালু পালের সামনে এসে বললেন—কেমন পালমশাই? কি বলেছিলাম

৩৪৯