পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বলে এবং কখনো কিছু খেতে পায় না বলে ক্রিয়াকর্মের নিমন্ত্রণের আমন্ত্রণের দিকে ওদের নজরটা একটু প্রখর।

 সুবাসী ভালোমানুষ বৌ। লাজুক আগে ছিল, এখন ক্রমাগত পরের বাড়িতে ধার চাইতে গিয়ে গিয়ে লজ্জা হারিয়ে ফেলেচে। খবরাখবর সেও কিছু সংগ্রহ করেচে। যা শুনেচে তাই বললে। গাঁয়ের ব্রাহ্মণেরা কেউ খাবে না নালু পালের বাড়ি।

 আন্নাকালী বললে—যাও দিকি একবার স্বর্ণদের বাড়ি।

 —তুমি যাবে মা?

 —আমি ডাল বাটি। ডাল ক’টা ভিজতি দিয়েলাম, না বাটলি নষ্ট হয়ে যাবে, বচ্ছরের পোড়ানি তে উঠলোই না। শোন্‌ তোরে বলি বৌমা—

 —কি মা?

 আন্নাকালী এদিক ওদিক চেয়ে গলার সুর নিচু ক’রে বললেন—স্বর্ণকে বলে আয়, আর যদি কেউ না যায়, আমরা দু’ঘর নুকিয়ে যাবো একটু বেশী রাত্তিরি। তুই কি বলিস?

 —ফণি জ্যাঠামশাই কি ওঁর বৌ দেখতি পেলি বাঁচবে?

 —রাত হলি যাবো। কেডা টের পাচ্চে!

 —এ গাঁয়ে গাছপালার কান আছে!

 —তুই জেনে আয় তো।

 সুবাসী গেল যতীনের বৌ স্বর্ণের কাছে। এরাও গাঁয়ের মধ্যে বড্‌ড গরীব। একরাশ থোড কুটছে বসে বসে স্বর্ণ। পাশে দুটো ডেঙো ডাঁটার পাকা ঝাড়। সুবাসী বললে—কি রান্না করচো স্বর্ণদিদি?

 —এসো সুবাসী। উনি বাড়ি নেই, তাই ভাবলাম মেয়েমান্‌ষির রান্না আর কি করবো, ডাঁটা শাকের চচ্চড়ি করি আর কলায়ের ডাল রাঁধি।

 —সত্যি তো।

 —বোস সুবাসী।

 —বসবো না দিদি। শাশুড়ী বলে, পাঠালে, তোমরা কি তুলসীদিদিদের

৩৫২