বাড়ি নেমন্তন্নে যাবা?
—ননদ তো বলছিল, যাবা নাকি বৌদিদি? আমি বললাম, গাঁয়ের কোনো বামুন যাবে না, সেখানে কি করে যাই বল। তোরা যাবি?
—তোমরা যদি যাও, তবে যাই।
—একবার নন্দরাণীকে ডেকে নিয়ে আয় দিকি।
যতীনের বোন নন্দরাণীকে ফেলে ওর স্বামী আজ অনেকদিন কোথায় চলে গিয়েছে। কষ্টেসৃষ্টে সংসার চলে। যতীনের বাবা ৺রূপলাল মুখুয্যে কুলীন পাত্রেই মেয়ে দিয়েছিলেন অনেক যোগাড়যন্ত্র করে। কিন্তু সে পাত্রটির আরো অনেক বিয়ে ছিল, একবার এসে কিছু প্রণামী আদায় করে শ্বশুরবাড়ী থেকে চলে যেতো। নন্দরাণীর ঘাড়ে দু’তিনটি কুলীন কন্যার বোঝা চাপিয়ে আজ বছর চার-পাঁচ একেবারে গা-ঢাকা দিয়েচে। কুলীনের ঘরে এই রকমই নাকি হয়।
নন্দরাণী পিঁড়ি পেতে বসে রোদে চুল শুকুচ্ছিল। সুবাসীর ডাকে সে উঠে এল। তিনজনে মিলে পরামর্শ করতে বসলো।
নন্দরাণী বললে—বেশি রাতে গেলি কেডা দ্যাখচে?
স্বর্ণ বললে—তবে তাই চলো। তুলসীকে চটিয়ে লাভ নেই। আপদে বিপদে তুলসী বরং দেখে, আর কেডা দেখবে? একঘরে করার বেলা সবাই আছে।
অনেক রাত্রে ওরা লুকিয়ে গেল তুলসীদের বাড়ি। তুলসী যত্ন করে খাওয়ালে ওদের। সঙ্গে এক এক পুঁটুলি ছাঁদা বেঁধে দিলে। যতীন সে রাত্রেই বাড়ি এল। স্বর্ণ এসে দেখলে, স্বামী শেকল খুলে ঘরের আলো জ্বেলে বসে আছে। স্ত্রীকে দেখে বললে—কোথায় গিইছিলে? হাতে ও কি? গাইঘাটা থেকে দু’কাঠা সোনা মুগ চেয়ে আনলাম এক প্রজা-বাড়ি থেকে। ছেলেপিলে খাবে আনন্দ ক’রে। তোমার হাতে ও কি গা?
—সে খোঁজে দরকার নেই। খাবে তো?
—খিদে পেয়েচে খুব। ভাত আছে?