পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এসেচে একথা প্রকাশ না হয়ে পড়ে। পড়লেই বড় মুস্কিল। কিন্তু ভগবানের ইচ্ছায় ঠিক সেই সময় ভবানী বাঁড়ুয্যে এসে ওদের খাবার জন্যে আহ্বান করলেন। কথা চাপা পড়ে গেল।

 শ্রোত্রিয় ব্রাহ্মণ রামহরি চক্রবর্তীর সঙ্গে এক পংক্তিতে বসে ফণি চক্কত্তি ও এঁরা খাবেন না। অন্য জায়গায় পিঁড়ি পেতে বসিয়ে খাওয়ানো হোলো এবং শুধু তাই নয়, খোকাকে তার জন্মদিনের পায়েস খাওয়ানোর ভার পড়লো তাঁর ওপর। রামহরি চক্রবর্তীর পাশেই খোকার পিঁড়ি পাতা। ঘোমটা দিয়ে তিলু ওদের দুজনকে বাতাস করতে লাগল বসে।

 রামহরি বললেন—তোমার নাম কি দাদু?

 খোকা লাজুক সুরে বললে—শ্রীরাজ্যেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।

 —কি পড়?

 এবার উৎসাহ পেয়ে থোকা বললে—হরু গুরুমশায়ের পাঠশালায় পড়ি। কলকাতায় থাকে শম্ভুদাদা, তার কাছে ইংরিজি পড়তি চেয়েচি, সে শেখাবে বলেচে।

 —বাঃ বাঃ, এইটুকু ছেলে নাকি ইঞ্জিরি পড়বে! তবে তো তুমি দেশের হাকিম হবা। বেশ দাদু বেশ। হাকিম হওয়ার মত চেহারাখানা বটে।

 —মা বলচে, আপনি আর কিছু নেবেন না?

 —না, না, যথেষ্ট হয়েছে। তিনবার পায়েস নিইচি, আবার কি? বেঁচে থাকো দাদু।

 বামুন ভোজনের দালাল রামহরি চক্রবর্তীকে এমন সম্মান কেউ দেয় নি কুলীন ব্রাহ্মণের বাড়িতে। বিদায় নিয়ে যাবার সময়ে রামহরি তিলুকে প্রণাম করে বললেন—চলি মা, চেরডা কাল মনে থাকবে, আজ যা করলে মা আমার। এ যত্ন কখনো ভোলবো না। আজ বোঝলাম আপনারা এ দিগরের রামা শামার মত লোক নন। দু’হাত দু’পা থাকলি মানুষ হয় না মা। গলায় পৈতি ঝোলালি কুলীন ব্রাহ্মণ হয় না—

৩৫৬