পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 কত কি পরিবর্তন হয়ে গেল গ্রামে। রেল খুললো চাকদা থেকে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত। একদিন তিলু ও নিলু স্বামীর সঙ্গে আড়ংঘাটায় ঠাকুর দেখতে গেল জ্যৈষ্ঠ মাসে। ওরা গরুর গাড়ি করে চাকদা পর্যন্ত এসে গঙ্গাস্নান করে সেখানে বেঁধেবেড়ে খেলে। সঙ্গে খোকা ছিল, তার খুব উৎসাহ রেলগাড়ি দেখবার। শেষকালে রেলগাড়ি এসে গেল। ওরা সবাই সেই পরামাশ্চর্য জিনিসটিতে চড়ে গেল আড়ংঘাটা। ফিরে এসে বছর খানেক ধরে তার গল্প আর ফুরোয় না ওদের কারো মুখে।

 খোকা এদিকে পাঠশালার পড়া শেষ করলে। ভবানী একদিন তিলুর সঙ্গে পরামর্শ করলেন ওকে ছাত্রবৃত্তি পড়িয়ে মোক্তারী পড়াবেন, না টোলে সংস্কৃত পড়তে দেবেন। মোক্তারী পড়লে সতীশ মোক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।

 তিলু বললে—নিলুকে ডাকো।

 নিলুর আর সে স্বভাব নেই। এখন সে পাকা গিন্নী। সংসারের সব কাজ নিখুঁতভাবে খুঁটিয়ে করতে ওর জুড়ি নেই। সে এসে বললে—টুলুকে জিগ্যেস করো না? আহা, কি সব বুদ্ধি!

 টুলুর ভালো নাম রাজ্যেশ্বর! সে গম্ভীর স্বভাবের ছেলে, চেহারা খুব সুন্দর, যেমন রূপ তেমনি বুদ্ধি। বাবাকে বড় ভালোবাসে। বিশেষ পিতৃভক্ত। সে এসে হেসে বললে—বাবা বলো না? আমি কি জানি? আর ছোট মা তো কিছু জানেই না। কলের গাড়িতে উঠে সেদিন দেখলে না? পান সাজতে বসলো। রানাঘাট থেকে কলের গাড়ি ছাড়লো তো টুক করে এলো আড়ংঘাটা। আর ছোট মার কি কষ্ট! বললে, দুটো পান সাজতি সাজতি গাড়ি এসে গেল তিনকোশ রাস্তা! হি-হি—

 নিলু বললে—তা কি জানি বাবা, আমরা বুড়োসুড়ো মানুষ। চাকদাতে আগে আগে গঙ্গাস্নান করতি য্যাতাম পানের বাটা নিয়ে পান সাজতি সাজতি। অমন হাসতি হবে না তোমারে—

 —আমি অন্যায় কি বল্লাম? তুমি কি জানো পড়াশুনোর? মা তবুও সংস্কৃত

৩৫৭