অকারণে গাঁয়ের লোকদের সামনে ইংরিজি বলে বাহাদুরি নেবার জন্যে।
তিলু হেসে বললে—এই খোকা, তোর শম্ভুদাদা কেমন ইংরিজি বলে রে?
—ইট্ সেইস্ট মাট্ ফুট্—ইট সুনটু-ফুট্-ফিট্—
ভবানী বললেন—বা রে! কখন শিখলি এত?
নিলু বললে—শুনে শিখিচি। বলে তাই শুনি কিনা। যা বলে, সেরকম বলি।
ভবানী বললেন—সত্যি, ঠিক ইংরিজি শিখেচে দ্যাখো। কেমন বলচে।
নিলু বললে—সত্যি, ঠিক বলচে তো!
তিনজনেই খুব খুশি হোলো খোকার বুদ্ধি দেখে। খোকা উৎসাহ পেয়ে বললে—আমি আরো জানি, বলবো বাবা? সিট্ এ হিপ্ সিট্-ফুট-এ পট-আই মাই—ও বাবা এ দুটো কথা খুব বলে আই আর মাই—সত্যি বলচি বাবা—
নিলু অবাক হয়ে ভাবলে—কি আশ্চর্য বুদ্ধিমান তাদের খোকা।
প্রসন্ন চক্রবর্তী নীলকুঠির চাকরি যাওয়ার পরে দু’বছর বড় কষ্ট পেয়েচে। আমীনের চাকরি জোটানো বড় কষ্ট। বসে বসে সংসার চলে কোথা থেকে। অনেক সন্ধানের পর বর্তমান চাকরিটা জুটে গিয়েচে বটে কিন্তু নীলকুঠির মত অমন সুখ আর কোথায় পাওয়া যাবে চাকরির? তেমন ঘরবাড়ি, তেমন পসার-প্রতিপত্তি দিশী জমিদারের কাছারীতে হবে না, হতে পারে না। চার বছর তবু কাটলো এদের এখানকার চাকরিতে। এটা পাল এস্টেটের বাহাদুরপুরের কাছারী। সকালে নায়েব ঘনশ্যাম চাকলাদার পাল্কি করে বেরিয়ে গেলেন চিতলমারির খাসখামারের তদারক করতে। প্রসন্ন আমীন একটু হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো। এরা নতুন মনিব, অনেক বুঝে চলতে হয় এদের কাছে, আর সে রাজারাম দেওয়ানও নেই, সেই নরহরি পেশ্কারও নেই, সে বড়সায়েবও নেই। নায়েবের চাকর রতিলাল নাপিত ঘরে ঢুকে বললে—ও আমীনবাবু, কি করচেন?
—এই বসে আছি। কেন?
—নায়েববাবুর হাঁসটা এদিকি এয়েল? দেখেচেন?