—দেখি নি।
—তামাক খাবেন?
—সাজ, দিকি এট্ট।
রতিলাল তামাক সেজে নিয়ে এল। সে নিজে নিয়ে না এলে নায়েবের চাকরকে হুকুম করার মত সাহস নেই প্রসন্ন চক্রবর্তীর।
রতিলাল বললে—আমীনবাবু, সকালে তো মাছ দিয়ে গেলো না গিরে জেলে?
—দেবার কথা ছিল? গিরে কাল বিকেলে হাটে মাছ বেচছিল দেখেচি। আড় মাছ।
—রোজ তো দ্যায়, আজ এলো না কেন কি জানি? নায়েবমশায় মাছ না হলি ভাত খেতি পারেন না মোটে। দেখি আর খানিক। যদি না আনে, জেলেপাড়া পানে দৌড়ুতি হবে মাছের জন্যি।
রতিলালের ভ্যাজ ভাজ ভালো লাগছিল না প্রসন্ন চক্কত্তির। তার মন ভালো না আজ, তাছাড়া নায়েবের চাকরের সঙ্গে বেশিক্ষণ গল্প করবার প্রবৃত্তি হয় না। আজই না হয় অবস্থার বৈগুণ্যে প্রসন্ন চক্কত্তি এখানে এসে পড়েচে বেঘোরে, কিন্তু কি সম্মানে ও রোবদারে কাটিয়ে এসেচে এতকাল মোল্লাহাটির কুঠিতে, তা তো ভুলতে পারচে না সে।
আপদ বিদায় করার উদ্দেশ্যে প্রসন্ন আমীন তাড়াতাড়ি বললে—তা মাছ যদি নিতি হয়, এই বেলা যাও, বেশি বেলা হয়ে গেলি মাছ সব নিয়ে যাবে এখন সোনাখালির বাজারে।
—যাই, কি বলেন?
—এখুনি যাও। আর দ্রিং কোরো না।
রতিলাল চলে গেল এবং কিছুক্ষণ পরেই দেখা গেল সে মাছের খাড়ুই হাতে বার হয়ে গেল কাছারীর হাত থেকে। প্রসন্ন চক্কত্তির মন শান্ত হয়ে এল সঙ্গে সঙ্গে। রোদে বসে তেল মেখে এইবার নেয়ে নেওয়া যাক। কাঁঠাল গাছতলায় রোদে পিঁড়ি পেতে সে রাঙা গামছা পরে তেল মাখতে বসলো। স্নান সেরে এসে রান্না করতে হবে।