পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রজাদের, তবে আমারে আর কি কেউ মানবে?—না কোনো কথা আমার কেউ শুনবে?

 ছোট সাহেব শিস দিতে দিতে চলে গেল। রাজারাম রাগে অভিমানে ফুলে উঠলেন। তখনি সদর আমিন প্রসন্ন চক্কত্তির ঘরে গিয়ে কি পরামর্শ করলেন দুজনে। প্রসন্ন চক্কত্তির বয়েশ চল্লিশের ওপরে, বেশ কালো রং, দোহারা গড়ন, খুব বড় এক জোড়া গোঁফ আছে, চোখগুলো গোল গোল ভাটার মত। সকলে বলে অমন বদমাইশ লোক নীলকুঠির কর্মচারীদের মধ্যে আর দুটি নেই। হয়কে নয় এবং নয়কে হয় করার ওস্তাদ। আমীনদের হাতে অনেক ক্ষমতাও দেওয়া আছে। সরল গ্রাম্য প্রজারা জরিপ কার্যের জটিল কর্মপ্রণালী কিছুই বোঝে না, রামের জমি শ্যামের ঘাড়ে এবং শুষ্ঠামের জমি যদুর ঘাড়ে চাপিয়ে মিথ্যে মাপ মেপে নীলের জমি বার করে নেওয়াই আমীনের কাজ। প্রজারা ভয় করে, সুতরাং ঘুষও দেয়। রাজারামের অংশ আছে ঘুষের ব্যাপারে। প্রসন্ন চক্কত্তি থেলো হুঁকোয় তামাক টানতে টানতে বললে -এ রকম কল্লি তো আমাদের কথা কেউ শোনবে না, ও দেওয়ানজি!

 রাজারাম সেটা ভালই বোঝেন। বললেন-তা এখন কি করা যায় বলো, পরামর্শ দাও।

 —বড় সায়েবকে বলুন কথাটা।

 —সে বাঘের ঘরে এখন যাবে কেডা?

 —আপনি যাবেন, আবার কেডা?

 বড় সাহেব শিপটন বেজায় রাশভারী জবরদস্ত লোক। ছোট সাহেবের মন একটু উদার, লোকটা মাতাল কিনা। সবাই তো তাই বলে। বড় সাহেবের কাছে যেতে সাহস হয় না। তার। কিন্তু মানের দায়ে যেতে হোল রাজারামকে। শিপটন মুখে বড় পাইপ টানছেন বসে, হাতখানেক লম্বা পাইপ। কি সব কাগজপত্র দেখচেন। তক্তপোশের মত প্রকাণ্ড একটা ভারী টেবিলের ধারে কাঁটাল কাঠের একটা বড় চেয়ার। সাতবেড়ের মুলাব্বর মিস্ত্রিকে দিয়ে টেবিল চেয়ার বড় সাহেবই তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন, নিজের

৩৩
ইছামতী-৩