পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৩৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আসুন। সেখানে নকুড় কাপালী কাছারীর পক্ষে উপস্থিত আছে। সে আপনাকে সব বুঝিয়ে দেবে। ওসমান গনির ভিটের পেছনে যে শিমুলগাছটা আছে—সেটা কত চেন রাস্তা থেকে হবে মেপে আসবেন তো।

 —চেন নিয়ে যাবো?

 —নিয়ে যান। আমার কানকাটা ঘোড়াটা নিয়ে যান, ছাড় ভোক দেবেন না, বাঁ পায়ে ঠোকা মারবেন পেটে। খুব দৌড়ুবে।

 এখন অবেলায় আবার চল রাহাতুনপুর! সে কি এখানে! ফিরতে কত রাত হবে কে জানে। নকুড় কাপালী সেখানে সব শেখারে প্রসন্ন চক্কত্তিকে! হাসিও পায় সে কি জানে জরীপের কাজের? আমীনের পিছু পিছু খোঁটা নিয়ে দৌড়োয়, বড়সায়েব যাকে বলতো ‘পিনম্যান’, সেই নকুড় কাপালী জরীপের খুঁটিনাটি তত্ত্ব বুঝিয়ে দেবে তাকে, যে পঁচিশ বছর এক কলমে কাজ চালিয়ে এল সাহেব-সুবোদের কড়া নজরে! শালুক চিনেচেন গোপাল ঠাকুর। নকুড় কাপালী।

 ঘোড়া বেশ জোরেই চললো যশোর চুয়াডাঙ্গার পাকা সড়ক দিয়ে। আজকাল রেল লাইন হয়ে গিয়েচে এদিকে। ক্রোশ খানেক দূর দিয়ে রেল গাড়ি চলাচল করচে, ধোঁয়া ওড়ে, শব্দ হয়, বাঁশি বাজে। একদিন চড়তে হবে রেলের গাড়িতে। ভয় করে। এই বুড়ো বয়সে আবার একটা বিপদ বাধবে ও সব নতুন কাণ্ডকারখানার মধ্যে গিয়ে? মানিক মুখুয্যে মুহুরী সেদিন বলছিল, চলুন আমীন মশাই, একদিন কালীগঞ্জে গঙ্গাস্তান করে আসা যাক রেলগাড়িতে চড়ে। ছ’ আনা নাকি ভাড়া রাণাঘাট পর্যন্ত। সাহস হয় না।

 বড় বড় শিউলি গাছের ছায়া পথের দু’ধারে শ্যামলতা ফুলের সুগন্ধ যেন কোন বিস্মৃত অতীত দিনের কার চুলের গন্ধের মত মনে হয়। কিছুই আজ আর মনে নেই। বুড়ো হয়ে যাচ্ছে সে। হাতও খালি। সামনে কতদিন বেঁচে থাকতে হবে, কি করে চলবে, অকর্মণ্য হয়ে পড়ে থাকলে কে দেবে খেতে? কেউ নেই সংসারে। বুড়ো বয়েসে যদি চেন টেনে জমি মাপামাপির খাটাখাটুনি না করতে পারে মাঠে মাঠে রোদে পুড়ে, জলে ভিজে, তবে কে দু’মুঠো ভাত

৩৬৬