ওপর রাগ করবেন না। মরে যাবো তা হলি-
—এখনই হয়েচে কি? তোমার উঠোনে গিয়ে নীলের দাগ মারবো। তোমার সায়েব বাবা যেন উদ্ধার করে তোমায়। দেখি তোমার কতদূর-
নবু গাজি এসে রাজারামের পা দুটো জড়িয়ে ধরলে।
রাজারাম রুক্ষ সুরে বললেন-না, আমার কাছে নয়। যা ও তোমার সেই সাহেব বাবার কাছে।
নবু গাজি তবুও পা ছাড়ে না।
রাজারাম বললেন-কি?
—আপনি না বাঁচালি বাঁচবো না। মুরুক্ষু মানুষ, করে ফেলেছি এক কাজ। ক্ষ্যামা দ্যান বাবু। আপনি মা-বাপ।
—আচ্ছা, এবার সোজা হয়ে এসো। তোমার জমি ছেড়ে দিতে পারি। কিন্তু-
—বাবু সে আমায় বলতে হবে না। আপনার মান রাখতি মূই জানি।
— যাও, জমি ছেড়ে দিলাম। কাল আমীনবাবু গিয়ে ঠিক করে আসবে। তবে মার্কা-তোলার মজুরিটা জরিপের কুলীদের দিয়ে দিও। যাও-
নবু গাজি আভূমি সেলাম করলে পুনরায়। চলে গেল সে কাঁটাপোড়ার বাঁওড়ের ধারে ধারে। দেওয়ান রাজারাম ও রায় সদর আমীন প্রসন্ন চক্কতির মুখে হাসি ফুটে উঠলো।
এই রকমই চলচে এদের শাসন অনেকদিন থেকে। বড় সাহেব ছোট সাহেব যদি বা ছাড়ে, এরা ছাড়ে না। চাষীদের, সম্পন্ন সম্রান্ত গৃহস্থদের ভালো ভালো জমিতে মার্ক দিয়ে আসে, সে জমিতে নীল পুতিতেই হবে। না পুতলে তার ব্যবস্থা আছে।
বড় সাহেব এ অঞ্চলের ফৌজদারি বিচারক। সপ্তাহে তিন দিন নীলকুঠিতে কোর্ট বসে। গোরু চুরি, ধান চুরি, মারামারি, দাঙ্গাহাঙ্গামার অভিযোগের বিচার হবে এখানেই। বড় কুঠির সাদা হল-ঘরে এ সময় নানা গ্রাম থেকে মামলা রুজু করতে লোক আসে। তেমাথার মোড়ে সনেকপুরের মাঠে একটা ফাঁসিকাঠ টাঙানো হয়েচে সম্প্রতি। রাজারাম বলে বেড়াছেন চারিদিকে যে