পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এবার বড় সাহেব ফাঁসির হুকুম দেওয়ার ক্ষমতা পেয়েচেন গভর্ণমেণ্ট থেকে।

 বড় সাহেব কিন্তু সুবিচারক। খুব মন দিয়ে উভয় পক্ষ না শুনে বিচার করে না। রায় দেবার সময় অনেক ভেবে দ্যায়। অপরাধীর যম, লঘুপাপে গুৰুদণ্ড সর্বদাই লেগে আছে। নীলকুঠির কাজের একটু ক্রটি হলে স্বয়ং দেওয়ানেরও নিষ্কৃতি নেই। তবু ছোট সাহেবের চেয়ে বড় সাহেবকে পছন্দ করে লোকে। দেওয়ানকে বলে-টোমাকে চুনের গুডামে পুরিয়া রাখিলে তুমি জবড হইবে।

 রাজারাম বলেন-আপনার ইচ্ছা হুজুর। আপনি করলি সব করতি পারেন।

 —You have a very oily tongue I know, but that wouldn't cut ice this time-তোমাকে আমি জবড করিটে জানে।

 —কেন জানবেন না। হুজুর। হুজুর মা-বাবা-

 —মা-বাবা! মা-বাবা! চুনের গুডামে পুরিলে টোমার জবড ঠিক হইয়া যাইবে।

 —হুজুরের খুশি।

 —যাও, ডশ টাকা জরিমানা হইল।

 —যে আজ্ঞে হুজুর।

 রাজারামের কাজ এ ভাবেই চলে।


 কুঠিতে জেলার ম্যাজিষ্ট্রেট বাহাদুর আসবেন। দেওয়ান রাজারাম ছুটোছুটি করে বেড়াচ্ছেন আজ সকাল থেকে। ভেড়া, মাছ, ভালো আম ও ঘি যোগাড় করবার ভার তাঁর ওপর। মাঝে মাঝে এ রকম লেগেই আছে, সাহেবসুবো অতিথি যাতায়াত করাচে মাসে দু’বার তিনবার!

 মুড়োপোড়ার তিনকড়িকে ডাকিয়ে এনেচেন তার একটি নধর শুওরের জন্যে। তিনকড়ি জাতে কাওর, শুওরের ব্যবসা ক’রে অবস্থা ফিরিয়ে ফেলেচে। দোতলা কোঠাবাড়ি, লোকজন, ধানের গোলা, পুকুর। অনেক ব্রাহ্মণ কায়স্থ তাকে খাতির করে চলে। রাজারামকে উপহার দেওয়ার জন্যে সে বাড়ি থেকে

৩৮