পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 খাও দাও, মেমেদের মাজা ধরে নাচে, বাস্, মিটে গেল।


 ভবানী বাড়ুয্যে যে বেশ সুখে আছেন।

 দেওয়ান বাজারাম রায়ের বাড়ি থেকে কিছুদুরে বাঁশবনের প্রান্তে দুখানা খড়ের ঘর তৈরি করে সেখানেই বসবাস কচেন আজ দু’বছর; তিলুর একটি ছেলে হয়েছে। ভবানী বড় যে কিছু করেন না, তিন-চার বিঘে ধানের জমি যৌতুক স্বরূপ পেয়েছিলেন, তাতে যা ধান হয়, গত বছর বেশ চলে গিয়েছিল। সে বছর সেই যে সাহেবটি তাদের ছবি এঁকে নিয়ে গিয়েছিল, এবার সে সাহেব তাকে একখানা চিঠি আর একখানা বই পাঠিয়েছে বিলেত থেকে। রাজারাম নীলকুঠি থেকে এই আর চিঠি এনে ভবানীর হাতে দেন। হাতে দিয়ে বলেন- ওহে ভবানী, এতে তিলুর ছবি কি করে এল? সাহেব একেছিল বুঝি? চমৎকার একেচে, একেবারে প্রাণ দিয়ে একেচে। কি সুন্দর ভঙ্গিতে একেচে। ওর ছবি কি করে আঁকলে সাব? থাক থাক, এ যেন আর কাউকে দেখিও না এ গায়ে। কে কি মনে করবে। ইংরিজি বই। কি তাতে লিখেচে কেউ বলতে পারে না, শুধু এইটুকু বোঝা যায় এই গা এবং যশোর অঞ্চল নিয়ে অনেক জায়গার ছবি আছে। সাহেবটা ভালো লোক ছিল।

 তিলু হেসে বললে-দেখলেন, কেন ছবি উঠেছে আমার।

 —আমাও।

 —বিলু-নিলুকে দেখাবেন। ও খুশি হবে। ডাকি দাঁড়ান-

 নিলু এসে হৈ-চৈ বাধিয়ে দিলে। সৰ তাতেই দিদি কেন আগে? তার ছবি কি উঠতে জানে না? দিদির সোগ ভুলতে পারবেন না বসের গুণমণি -অর্থাৎ ভবানী বাড়ুয্যে।

 তবে আজকাল ওদের অনেক চঞ্চলতা কমেচে। কথাবার্তায় ছেলেমিও আগের মত নেই। বিলুর স্বভাৰ অনেক বদলেচে, দু'এক মাস পরে আরও ছেলেপুলে হবে।

 তিলু কিন্তু অদ্ভুত। অবস্থাপন্ন গৃহস্থের ঘরের আদুরে আবদের মেয়ে হয়ে

৪৮