সয়ে থাকতো। অবশেষে বুড়ো বাহাত্তরে স্বামী তুললো পটল।
—তারপর?
—তারপর সতীনপো সতীনঝিরা মিলে কী দুর্দশা করতে লাগলো পিসির! তারপর তাড়িয়ে দিলে পিসিকে বাড়ি থেকে। পিসি কাঁদে আর বলে—আমার স্বামীর ভিটেতে আমাকে একটু থান দ্যাও। তা তারা দিলে না। পথে বার করে দিলে। সেকালের লজ্জাবতী মেয়েমানুষ, বয়েস হয়েছিল তা কি, কনে- বৌয়ের মত জড়োসড়ো। একজনেরা দয়া করে তাদের বাড়িতে আশ্রয় দিলে। কি কান্না পিসির! তারাই বাপের বাড়ি পৌছে দিয়ে গেল। তখনো স্বামী ধ্যান, স্বামী জ্ঞান। বাড়ি এসে পিসিকে একাদশী করতে হয়নি বেশিদিন। ভগবান সতীলক্ষ্মীকে দয়া করে তুলে নিলেন।
—এ কতদিন আগের কথা?
—অনেক দিনের। আমি তখন জন্মিচি কিন্তু আমার জ্ঞান হয়নি। পিসিমাকে আমি মনে করতে পারিনে। বড় হয়ে মা'র মুখে বৌদির মুখে সব শুনতাম। বৌদি তখন কনে-বৌ, সবে এসেছে এ বাড়ি।
তিলু চুপ করল, ভবানী বাড়ুয্যেও কতক্ষণ চুপ করে রইলেন। ভবানী বাড়ুয্যের মনে হোল, বৃথাই তিনি সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। সমাজের এই অত্যা- চারিতাদের সেবার জন্যে বার বার তিনি সংসারে আসতে রাজী আছেন। মুক্তি টুক্তি এর তুলনায় নিতান্ত তুচ্ছ।
কতদিন আগের সেই অভাগিনী কুলীন-কুমারীর স্মৃতি বহন করে ইছামতী তাঁদের সামনে দিয়ে বয়ে চলেছে, তাঁরই না-মেটা স্বামী-সাধের পুণ্য-চোখের জল ওর জলে মিশে গিয়েচে কতদিন আগে। আজ এই পানকলস ফুলের গন্ধ মাখনো চাঁদের আলোয় তিনিই যেন স্বর্গ থেকে নেমে বললেন—বাবা, আমার যে সাধ, পোরে নি, তোমার সামনে যে বসে আছে এই মেয়েটির তুমি সে সাধ পুরিও। বাংলা দেশের মেয়েদের ভালো স্বামী হও, এদের সে সাধ পূর্ণ হোক আমার যা পুরলো না—এই আমার আশীর্বাদ।
ভবানী বাড়য্যে তিলুকে নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ করলেন।