পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 যখন ওরা দেওয়ানবাড়ি পৌঁছলো তখন সন্ধ্যা অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েচে, একদণ্ড রাত্রিও কেটে গিয়েচে। জগদম্বা বললেন—ওমা, তোরা ছিলি কোথায় রে তিলু? নিলু এসেছিল এই খানিক আগে। বললে, তারা কতক্ষণ বাড়ি থেকে বেরিয়েছে। আমি জামাইয়ের জন্যে আহ্নিকের জায়গা করে জলখাবার গুছিয়ে বসে আছি ঠায়, কি যে কাণ্ড তোদের-

 তিলু বলে-কাউকে বোলো না বৌদিদি,উনি নদীর ধারে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাড়াতাড়ি ওঁকে জলখাবার খাইয়ে দাও। আমার মন কেমন করচে খোকনের জন্যে। কতক্ষণ দেখি নি। নিলু কী বললে, খোকন কাঁদছে না তো!

 —না, খোকন ঘুমিয়ে পড়েছে নিলু বলে গেল। তুই খেয়ে নে-

 —উনি আহ্নিক করুন আগে। দাদা আসেন নি?

 —তাঁর ঘোড়া গিয়েছে আনবার জন্যি।

 জলখাবার সাজিয়ে দিলেন জগদম্বা জামাইয়ের সামনে। শালাজ-বৌ হোলেও ভবানী তাকে শাশুড়ীর মত সম্মান করেন। জগদম্বা ঘোমটা দিয়ে ছাড়া বেরোন না জামাইয়ের সামনে। মুগের ডাল ভিজে, পাটালি, খেজুরের রস, নারকেল নাড়ু, চন্দ্রপুলি, ক্ষীরের ছাচ এবং ফেণী বাতাসা। তিলু খেতে খেতে বললে- বিলু-নিলুকে দিয়েচ?

 —নিলু এসে খেয়ে গিয়েছে, বিলুর জন্যি নিয়ে গিয়েছে।

 —এবার যাই বৌদি। খোকন হয়তো উঠে কাঁদবে।

 —জামাইকে নিয়ে আবার পরেও আসবি। দুখানা আঁদোসা ভেজে জামাইকে খাওয়াবো। খেজুরের রসের পায়েস করবো সেদিন। আজ মোটে এক ভাঁড় রস দিয়ে গেল ভজা মুচির ভাই, নইলে আজই করতাম।

 —শোনো বৌদি। তোমাদের জামাই বলে কি না আমার বাঙালে কথা। বলে-শিবির মাটি, পূবির ঘর। আবার এক ছড়া বার করেছে মুগির ডালি ঘি দিলি নাকি ক্ষীরির তার হয়—হি হি-

 —আহা, কি শহুরে জামাই! দেবো একদিন শুনিয়ে। তবুও যদি দাড়িতে

৫৪