পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

জট না পাকাতো! আমি যখন প্রথম দেখি তখন এত বড় দাড়ি, যেন নারদ মুনি।

 —তোমাদের জামাই তোমরাই বোঝো বৌদি। আমি যাই, খোকন ঠিক উঠেছে। আবার আসবো পরশু॥

 পথে বার হয়ে ভবানী আগে আগে, তিলু পেছনে ঘোমটা দিয়ে চলতে লাগলো। পাড়ার মধ্যে দিয়ে পথ। এখানে ওদের একত্র ভ্রমণ বা কথোপকথন আদৌ চলবে না।

 চন্দ্র চাটুয্যের চণ্ডীমণ্ডপের সামনে দিয়ে রাস্তা। রাত্রে সেখানে দাবার আচ্ছা বিখ্যাত। সম্পর্কে চন্দ্র চাটুয্যে হোলেন তিলুর মামাশ্বশুর। তিলু বুক টিপ টিপ করতে লাগলো, যদি মামাশ্বশুর দেখে ফেলেন? এত রাতে সে স্বামীর সঙ্গে পথে বেরিয়েছে!

 চণ্ডীমণ্ডপের সামনাসামনি যখন ওরা এসেচে তখন চণ্ডীমণ্ডপের ভিড়ের মধ্যে থেকে কে জিগ্যেস করে উঠল,—কে যায়?

 ভবানী গলা ঝেড়ে নিয়ে বললেন—আমি।

 —কে, ভবানী?

 —হ্যাঁ।

 —ও।

 লোকটা চুপ করে গেল। তিলু আরও এগিয়ে গিয়ে ফিস্ ফিস্ করে বললে “কে ডাকলে?

 —মহাদেব মুখুয্যে।

 —ভালো জ্বালা। আমাকে দেখলে নাকি?

 —দেখলে তাই কি? তুমি আমার সঙ্গে থাক, অত ভয়ই বা কিসের?

 —আপনি জানেন না এ গাঁয়ের ব্যাপার। ঐ নিয়ে কাল হয়তো রটনা রটবে। বলবে, অমুকের বৌ সদর রাস্তা দিয়ে তার স্বামী। সঙ্গে হেঁটে যাচ্ছিল গট গট করে।

 —বয়েই গেল। এসব বদলে যাবে তিলু, থাকবে না, সেদিন আসচে। তোমার আমার দিন চলে যাবে। ঐ খোকন যদি বাঁচে, ওর বৌকে নিয়ে

৫৫