পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 —কি করতি এলে?

 —মায়ের বিত্তিটা দিয়ে যাই। রোজ আসি।

 —বিত্তি?

 —হ্যাঁ গো।

 —কত?

 —দশ কড়া। আধ পয়সা।

 –বসো। একটু ধোঁয়া ছাড়বা না?

 —না, ওসব চলে না। বোসো তোমরা। আর কে কে আছে?

 —নেই এখন কেউ। হরি বোষ্টম আসে, মনু যুগী আসে, দ্বারিক কর্মকার আসে, হাফেজ আসে, মনসুর নিকিরি আসে।

 নালু কি একটা কথা বলতে গিয়ে বড় অবাক হয়ে গেল। তার চোখকে যেন বিশ্বাস করা শক্ত হয়ে উঠলো। দেওয়ানবাড়ির জামাই বাড়ুয্যে মশাইকে সে হঠাৎ দেখতে পেলে অশথতলার দিকে আসতে। উনিও কি এখানে গাঁজার আডড়ায়-?

 নালু দাঁড়ালো চুপ করে দাওয়ার বাইরে ছেচতলায়।

 ভবানী বাড়ুয্যে এসে বট তলায় বসলেন আসনের সামনে। মূর্তি নেই, ত্রিশূল বসানো সিঁদুরলেপা একটা উচু জায়গা আছে গাছতলায়, আসন বলা হয় তাকেই। ভবানী বাড়ুয্যে একমনে বসে থাকবার পরে সন্নিসিনী সেখানে এসে বসলো তাঁর পাশেই! সন্নিমিনীর রং কালো, বয়েস পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ, মুখশ্রী তাড়কা রাক্ষসীকে লজ্জা দেয়, মাথার দুদিক থেকে দুটি লম্বা জট এসে কোলের ওপর পড়েছে।

 ভবানী বললেন—কি খেপী, খবর কি?

 —ঠাকুর, কি খবর বলো।

 —সাধনা-টাধনা করচো?

 —আপনাদের দয়া। জেতে হাড়িভোম, কি সাধনা করবো আমরা ঠাকুর? আজও আসনসিদ্ধি হোল না দেবতা।

৬৫

 ইচ্ছামতী-৫