১২৭০ সালের বন্যার জল সরে গিয়েছে সবে।
পথঘাটে তখনও কাদা, মাঠে মাঠে জল জমে আছে। বিকেলবেলা ফিঙে পাখী বসে আছে বাবলা গাছের ফুলে-ভর্তি ডালে।
নালু পাল মোল্লাহাটির হাটে যাবে পান-সুপুরি নিয়ে মাথায় করে। মোল্লাহাটি যেতে নীলকুঠির আমলের সাহেবদের বটগাছের ঘন ছায়া পথে পথে। শ্রান্ত নালু পাল মোট নামিয়ে একটা বটতলায় বসে গামছা ঘুরিয়ে বিশ্রাম করতে লাগলো।
নালুর বয়স কুড়ি-একুশ হবে। কালো রোগা চেহারা। মাথার চুল বাবরি-করা, কাঁধে রঙিন্ রাঙা গামছা- তখনকার দিনের শৌখিন বেশভূষা পাড়াগাঁয়ের। এখনো বিয়ে করে নি, কারণ মামাদের আশ্রয়ে এতদিন মানুষ হচ্ছিল, হাতেও ছিল না কানাকড়ি। সম্প্রতি আজ বছর খানেক হোল নালু পাল মোট মাথায় করে পান-সুপুরি বিক্রি করে হাটে হাটে। সতেরো টাকা মূলধন তার এক মাসীমা দিয়েছিলেন যুগিয়ে। এক বছরে এই সতেরো টাকা দাঁড়িয়েছে সাতান্ন টাকায়। খেয়ে দেয়ে। নিট লাভের টাকা।
নালুর মন এজন্যে খুশি আছে খুব। মামার বাড়ির অনাদরের ভাত গলা দিয়ে ইদানীং আর নামতো না। একুশ বছর বয়সের পুরুষমানুষের শোভা পায় না অপরের গলগ্রহ হওয়া। মামীমার সে কি মুখনাড়া একপলা তেল বেশী মাথায় মাখবার জন্যে সেদিন।
মুখনাড়া দিয়ে বললেন- তেল জুটবে কোত্থেকে অত? আবার বাবরি চুল রাখা হয়েছে, ছেলের শখ কত— অত শখ থাকলে পয়সা রোজগার করতে হয় নিজে।
নালু পাল হয়তো ঘুমিয়ে পড়তো বটগাছের ছায়ায়, এখনো হাট বসবার অনেক দেরি, একটু বিশ্রাম করে নিতে সে পারে অনায়াসে— কিন্তু এই সময় ঘোড়ায় চড়ে একজন লোক যেতে যেতে ওর সামনে থামলো।
নালু পাল সসম্ভ্রমে দাঁড়িয়ে উঠে বললে— রায় মশায় ভালো আছেন?
পেন্নাম—