পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হনুমানদাসজীর তিনি ছিলেন গুরুভাই। স্থায়ীর বাণীটি শ্রোতাদের সামনে নিখুঁত পাকা সুরে শুনিয়ে নিয়ে তারপর এমন সুন্দর অলঙ্কার সৃষ্টি করতেন, এমন মধুর সুরলহরী ভেসে আসতো তাঁর কণ্ঠ থেকে সুরপুরের বীণানিক্কণের মত-যে কতকাল আগে শুনলেও আজও যখনি চোখ বোজেন ভবানী শুনতে পান ত্রিশ বছর আগে শোনা সেই অপূর্ব দরবারী কানাড়ার সুরপুঞ্জ।

 বড় শিল্পী সবার অলক্ষো কখন যে মনোহরণ করেন, কখন তাঁর অমর বাণী দরদের সঙ্গে প্রবেশ করিয়ে দেন মানুষের অন্তরতম অন্তরটিতে!

 ভবানী বিস্মিত হয়ে উঠলেন। এই মা ও শিশুর মধ্যেও সেই অমর শিল্পীর বাণী, অন্য ভাষায় লেখা আছে। কেউ পড়তে পারে, কেউ পারে না।

 বাইরে বাঁশগাছে রাতচরা কি পাখী ডাকচে, জিউলি গাছের বউলের মধু খেতে যাচ্ছে পাখীটা। জেলেরা আলোয় মাছ ধরছে বাঁওড়ে, ঠক্ ঠক্ শব্দ হচ্চে তার। আলোয় মাছ ধরতে হলে নৌকার ওপর ঠক ঠক শব্দ করতে হয়— এ ভবানী বাড়ুয্যে এদেশে এসে দেখছেন। বেশ দেশ। ইছামতীর স্নিগ্ধ জলধারা তার মনের ওপরকার কত ময়লা ধুয়ে মুছে দিয়েছে। সংসারের রহস্য যারা প্রত্যক্ষ করতে ইচ্ছে করে, তারা চোখ খুলে যেন বেড়ায় সব সময়। সংসার বর্জন করে নয়, সংসারে থেকেই সেই দৃষ্টি লাভ করতে পারার মন্ত্র ইছামতী যেন তাকে দান করে। কলম্বনা অমৃতধারাবাহিনী ইছামতী!...যে বাণী মনে নতুন আশা আনন্দ আনে না, সে আবার কোন্ ঈশ্বরের বাণী?

 তিলু বললে-সত্যি বলুন, কবে ভাত দেবেন?

 —তুমিও যেমন, আমরা গরীব। তোমার বাপের বাড়ির মান বজায় রেখে দিতে গেলে কত লোককে নেমন্তন্ন করতে হবে। সে এক হৈ-হৈ কাণ্ড হবে। আমি ঝামেলা পছন্দ করিনে।

 —সব ঝামেলা পোয়বো আমি। আপনাকে কিছু ভাবতি হবে না।

 —যা বোঝো করে। খরচ কেমন হবে?

 —চালডাল আনবো বাপের বাড়ি থেকে। দু’টাকার তরকারি এক গাড়ি হবে। পাঁচখানা গুড় পাঁচসিকে। আধ মণ দুধ এক টাকা। দেড় মণ মাছ

৬৯