পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ছেলে। রায়পাড়া, ঘোষপাড়া ও পুবেরপাড়া ঘুরে এলেন ভবানী বাঁড়ুয্যে অতটুকু শিশুকে কোলে করে নিয়ে। বাড়ি বাড়ি শাঁখ বাজতে লাগলো। মেয়েরা ঝুঁকে দেখতে এল খোকাকে।

 ব্রাহ্মণভোজনের সময় নিমন্ত্রিতদের মধ্যে পরস্পর প্রতিযোগিতা হতে লাগলো। কে কত কলাইয়ের ডাল খেতে পারে। কে কত মাছ খেতে পারে। মিষ্টি শুধু নারকেল নাড়ু,। খেতে বসে অনেকে বললেন এমন নারকোলের নাড়ু, তাঁরা অনেককাল খান নি। অন্য কোন মিষ্টির রেওয়াজ ছিল না দেশে। এক একজন লোক সাত-আট গণ্ডা নারকোলের নাড়ু, আরো অতগুলো অন্নপ্রাশনের জন্য ভাজা আনন্দনাড়ু, উড়িয়ে দিলে অনায়াসে।

 ব্রাহ্মণভোজন প্রায় শেষ হয়েছে এমন সময় কুখ্যাত হলা পেকে বাড়িতে ঢুকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করলে ভবানী বাঁড়ুয্যেকে। ভবানী ওকে চিনতেন না, নবাগত লোক এ গ্রামে। অন্য সকলে তাকে খুব খাতির করতে লাগলো। রাজারাম বললেন- এসো বাবা হলধর, বাবা বসো-

 ফণি চক্কতি বললেন—বাবা হলধর, শরীর গতিক ভালো?

 দুর্দান্ত ডাকাতের সর্দার, রণ-পা পরে চল্লিশ ক্রোশ রাস্তা রাতারাতি পার হওয়ার ওস্তাদ, অগুনতি নরহত্যাকারী ও লুটেরা, সম্প্রতি জেল-ফেরত হলা পেকে সবিনয়ে হাতজোড় করে বললে-আপনাদের ছিচরণের অশিব্বাদে বাবাঠাকুর-

 —কবে এলে?

 — এলাম শনিবার বেনবেলা বাবাঠাকুর। আজ এখানে দুটো পেরসাদ পাবো ব্রাহ্মণের পাতের-

 —হ্যাঁ হ্যাঁ, বাবা বোসো।

 হলা পেকে নীলকুঠির কোর্টের বিচারে ডাকাতির অপরাধে তিন বৎসর জেলে প্রেরিত হয়েছিল। গ্রামের লোকে সভয়ে দেখলে সে খালাস পেয়ে ফিরেচে। ওর চেহারা দেখবার মত বটে। যেমন লম্বা তেমনি কালো দশাসই সাজোয়ান পুরুষ, একহাতে বন বন করে ঢেঁকি ঘোরাতে পারে, অমন লাঠির ওস্তাদ এদেশে নই—একেবারে নির্ভীক, নীলকুঠির মুডি সাহেবের টমটম গাড়ী উল্টে দিয়েছিল

৭২