পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘোড়ামারির মাঠের ধারে। তবে ভরসা এই দেবদ্বিজে নাকি ওর অগাধ ভক্তি, ব্রাহ্মণের বাড়ি সে ডাকাতি করেচে বলে শোনা যায় নি, যদিও এ-কথায় খুব বেশী ভরসা পান না। এ অঞ্চলের ব্রাহ্মণেরা।

 হলা পেকে খেতে বসলে সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়াল। সবাই বলতে লাগলো। বাবা হলধর, ভালো ক’রে খাও।

 হলধর অবিশ্যি বলবার আবশ্যক রাখলে না কারো। দু কাঠা চালের ভাত, দু হাঁড়ি কলাইয়ের ডাল, এক হাঁড়ি পায়েস, আঠারো গণ্ডী নারকেলের নাড়ু, একখোৱা অম্বল আপ দু ঘটি জল খেয়ে সে ভোজন-পর্ব সমাধা করলে।

 তারপর বললে - খোকার মুখ দেখবো।

 তিলু শুনে ভয় পেয়ে বললে-ওমা, ও খুনে ডাকাত, ওর সামনে খোকারে বার করবে না। আমি।

 শেষ পর্যন্ত ভবানী বাড়ুয্যে নিজে খোকাকে কোলে নিয়ে হলা পেকের কোলে তুলে দিতেই সে গাঁট থেকে এক ছড়া সোনার হার বার ক’রে খোকার গলায় পরিয়ে দিয়ে বললে,—আমার আর কিছু নেই দাদা-ভাই, এ ছেল, তোমারে দিলাম। নারায়ণের সেবা হলে আমার!

 ভবানী সন্ধিগ্ধ দৃষ্টিতে হারছড়ার দিকে চেয়ে বললেন-না, এ হার তুমি দিও না। দামী জিনিসটা কেন দেবে? বরং কিছু কিনে দিও-

 হলা পেকে হেসে বললে-বাবাঠাকুর, আপনি যা ভাবচেন, তা নয়। এ লুঠের মাল নয়। আমার ঘরের মানুষের গলার হার ছেল, তিনি স্বগগে গিয়েচে আজ বাইশ-তেইশ বছর। আমার ভিটেতে ভাঁড়ের মধ্যে পোঁতা ছেল। কাল এৱে তুলে তেঁতুল দিয়ে মেজেচি। অনেক পাপ কবেছি জীবনে। ব্রাহ্মণকে আমি মানিনে বাবাঠাকুর। সব দুষ্ট; খোকাঠাকুর নিষ্পাপ নারায়ণ। ওর গলায় হার পরিয়ে আমার পরকালের কাজ হোল। আশীব্বাদ করুন।

 উপস্থিত সকলে খুব বাহবা দিলে হলা পেকেকে। ভবানী নিজেকে বিপন্ন বোধ করলেন বড়। তিলুকে নিয়ে এসে দেখাতে তিলুও বললে-আপনি ওকে ফেরত দিন। খোকনের গলায় ও দিতি মন সৱে না।

৭৩