পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

সমাবেশ। কোনো মাসেই ফুল বাদ যায় না—বনে বনে ধুন্দুলের ফুল, রাধালতার ফুল, কেয়া, বিল্বপুষ্প, আমের বউল, সুয়ো, বনচটকা, নাটা-কাঁটার ফুল।

 ইছামতীর ধারে এদেশে লোকের বাস নেই, নদীর ধারে বনঝোপের সমাবেশ খুব বেশ। ভবানী বাড়ুয্যে একটি সাধন কুটির নির্মাণ করে সাধনভজন করবেন, বিবাহের সময় থেকেই এ ইচ্ছা তাঁর ছিল। কিন্তু ইচ্ছামতীর ধারে অধিকাংশ জমি চাষের সময় নীলকুঠির আমীনে নীলের চাষের জন্য চিহ্নিত করে যায়। খালি জমি পাওয়া কঠিন। ভবানী বাঁড়ুয্যেও আদৌ বৈষয়িক নন, ওসব জমিজমার হাঙ্গামে জড়ানোর চেয়ে নিস্তব্ধ বিকেলে দিব্যি নির্জনে গাঙের ধারের এক যজ্ঞিডুমুর গাছের ছায়ায় বসে থাকেন। বেশ কাজ চলে যাচ্চে। জীবন ক’দিন? কেন বা ওসব ঝঞ্চাটের মধ্যে গিয়ে পড়বেন। ভালোই আছেন।

 তাঁর এক গুরুভ্রাতা পশ্চিমে মির্জাপুরের কাছে কোন পাহাড়ের তলায় আশ্রমে থাকেন। খুব বড় বেদান্তের পণ্ডিত-সন্ন্যাসাশ্রমের নাম চৈতন্য ভারতী পরমহংসদেব। আগে নাম ছিল গোপেশ্বর রায়। ভবানীর সঙ্গে অনেকদিন একই টোলে ব্যাকরণ পড়েছেন। তারপর গোপেশ্বর কিছুকাল জমিদারের দপ্তরে কাজ করেন পাটুলি-বলাগড়ের সুপ্রসিদ্ধ রায়বাবুদের এস্টেটে। হঠাৎ কেন সন্ন্যাসী হয়ে বেরিয়ে চলে যান, সে খবর ভবানী জানেন না; কিন্তু আশ্রমে বসবার পরে ভবানী বাড়ুয্যেকে দু’চারখানা চিঠি দিতেন।

 সেই সন্ন্যাসী গোপেশ্বর তথা চৈতন্যভারতী পরমহংস একদিন এসে হাজির ভবানী বাঁড়ুয্যের বাড়ি। একমুখ আধ-পাকা আধ -কাঁচা দাড়ি, গেরুয়া পরনে, চিমটে হাতে, বগলে ক্ষুদ্র বিছানা। তিল খুব যত্ন-আদর করলে। ঘরের মধ্যে থাকবেন না। বাইরে বাঁশতলায় একটা কম্বল বিছিয়ে বসে থাকেন সারাদিন। ভবানী বলেন—পরমহংসদেব, সাপে কামড়াবে। তখন আমায় দোষ দিও না যেন।

 চৈতন্যভারতী বলেন—কিছু হবে না ভাই। বেশ আছি।

 —কি খাবে?

 —সব।

৭৬