পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করি। শুকদেবের কথাই বলি-তক্তৈষণাঃ সর্বে যযুর্ধীরান্তপোবন -সকল বাসনা ত্যাগ করে পরে তপোবনে যাবে। কিন্তু বাসনা থাকতে নয়। সংসার করলে ভগবানকে ডাকতে নেই তাই বা তোমায় কে বলেছে?

 ঢাকতে নেই কেউ বলে নি। ডাকা যায় না এই কথাই বলেচে। জ্ঞান হয় না, ভক্তিও হয় না।

 বেশ দেখবো। ভগবান তোমাদের মত অত কড়া নয়। অন্ততঃ আমি বিশ্বাস করি না যে সংসারে থাকলে ভক্তিলাভ হয় না। সংসার তবে ভগবান সৃষ্টি করলেন কেন? তিনি প্রতারণা করবেন তাঁর অবোধ সন্তানদের? যারা নিতান্ত অসহায়, তিনি পিতা হয়ে তাদের সামনে ইচ্ছে করে মায়া ফাদ পেতেছেন তাদের জালে জড়াবার জন্যে? এর উত্তর দাও।

 —এষাবৃতির্ণাম তমোগুণস্য -তমোগুণের শক্তিই আবরণ। বস্তু যথার্থভাবে প্রতিভাত না হয়ে অন্য প্রকারে প্রতিভাত হয়-এই জন্যেই তমোগুণের নাম বৃতি। ভগবানকে দোষ দিও না। ও ভাবে ভগবানকে ভাবচো কেন? বেদান্ত পড়লে বুঝতে পারবে। ও ভাবে ভগবান নেই। তিনি কিছুই করেন নি। তোমার দৃষ্টির দোষ। মায়ার একটা শক্তির নাম বিক্ষেপ, এই বিক্ষেপ তোমাকে মোহিত করে রেখে ভগবানকে দেখতে দিচ্ছে না।

 তাঁর শরণাগত হয়ে দেখাই যাক না। তাঁর কৃপার দৌড়টা দেখবে বলিচি তত। মায়াশক্তি-ফ। যত বড়ই হোক, তাদের চেয়ে তাঁর শক্তি বড়। মায়াশক্তি কি ভগবান ছাড়া? তার সংসারে সবই তার জিনিস। তিনি ছাড়া আবার মায়া এল কোথা থেকে? গোঁজামিল হয়ে যাবে যে।

 —গোঁজামিল হয় নি। আমার কথা তুমি বুঝতেই পারলে না। শ্বেতাশ্বতর শ্রুতিতে বলেচে, ‘অজামেকাং’ অজ্ঞান কারো সৃষ্ট নয়। যিনিই সমষ্টিরূপে ঈশ্বর, তিনিই ব্যষ্টিতে কার্যরূপে জীব। অদ্বৈত বেদান্তে বলে, সমষ্টিতে বর্তমান যে চৈতন্য তাই হোল কার্য। অর্থাৎ ঈশ্বর জীব কার্য। কিন্তু স্বরূপে উভয়েই এক। কেবল উপাধিতে ভিন্ন। তুমিই তোমার ঈশ্বর। আবার ঈশ্বর কে?

 একবার এক রকম বলে, গীতার শ্লোক ওঠালে আবার এখন অদ্বৈত

৭৯