পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ফেলবার দরজা।

 ভারতী মশাই অনেকদিন ঘরছাড়া, জিজ্ঞেস করলেন—চাপা সিঁড়ি কি?

 নিলু বললে—চাপা সিঁড়ি দেখেন নি? আমার বাপের বাড়ি আছে দেখার। সিঁড়িতে ওঠবার পর দোতলায় যেখানে গিয়ে পা দেবেন, সেখানে থেকে চাপা সিঁড়ি মাথার ওপর দিয়ে ফেলে দেয়। সে দরজার কবাট থাকে মাথার ওপর। তাহোলে ডাকাতেরা আর দোতলায় উঠ্‌তি পারে না।

 —কেন পারবে না?

 হলা পেকে উত্তর দিলে এ কথার। বললে—আপনাকে বুঝিয়ে বল্‌তি পারলে না দিদিমণি। চাপা সিঁড়ি চেপে ফেলে দিলি আর দোতলায় ওঠা যায় না। বড্ড কঠিন হয়ে পড়ে। এমনি সিঁড়ি যা, তার মুখের কবাট জোড়া কুডুল দিয়ে চালা করা যায়, চাপা সিঁড়ির কবাট মাথার ওপর থাকে, কুড়ুল দিয়ে কাটা যায় না! বোঝলেন এবার?

 —যাক, তারপর কি হোল?

 —তখন আমি দেখচি কি বাবাঠাকুর সাক্ষাৎ কালী পির্‌তিমে। মাথার চুল এলো, দশাসই চেহারা, কি চমৎকার গড়ন-পেটন, মুখচোখ—সড়কি ধরেচে যেন সাক্ষাত্‌ দশভুজা দুগ্‌গা। ঘাম-তেল মুখে চক্‌চক্‌ করচে, চোখ দুটোতে যেন আলো ঠিক্‌রে বেরুচ্চে। সত্যি বলচি বাবাঠাকুর, অনেক মেয়ে দেখিচি, অমন চেহারা আর কখনো দেখিনি। আর সড়কি চালানো কি? যেন তৈরি হাত। ব্যাঁকা করে খোঁচা মারে, আর লাগলি নাড়িভুঁড়ি নামিয়ে নেবে এমনি হাতের ট্যার্চা তাক্‌। মনে মনে ভাবি, সাবাস্‌ মা, বলিহারি! দুধ খেয়েলে বটে!

 —তারপর? তারপর?

 চৈতন্যভারতী অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে উঠলেন। সোজা হয়ে উঠে বসলেন খুনির সামনে।

 —একবার ভাবলাম যা থাকে কপালে, লড়ে দেখবে। তারপর ভাবলাম, না, পিছু হটি। গতিক আজ ভাল না। আমি পিছিয়ে পড়িচি, বীরো হাড়ি

৮৬