পাতা:ইছামতী - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

রক্তে ধরণী ভাসচে বাবাঠাকুর। লোকজন এসে পড়বার আর দ্রিং নেই। তখন বেমো মুচির কাতানখানা চেয়ে নিয়ে এক কোপে ওর মুণ্ডুটা ঝট্‌কে ফেলে ধড়টা ডোবায় টান্ মেরে ফেলে দেলাম—মুণ্ডুটা সাথে নিয়ে এ্যালাম। কেননা তাহলি লাশ সেনাক্ত করতি পারবে না—ব্যাটা বীরো হাড়ির মু্ণ্ডু চোখ চেয়ে মোর দিকি চেয়ে বলে যেন আমারে বকুনি দেচ্চে—এখনো যেন চোখ দুটো মুই দেখতি পাই, যেন মোর দিকি চেয়ে কত কি বলচে মোরে—

 —তারপর সে বৌটির কি হোল?

 —কিছু জানি নে। তবে দু’ মাস পরে ফকির সেজে আবার গিয়েলাম মোড়লবাড়ি সেই বৌটারে দেখবো বলে।—দুটো ভিক্ষে দাও মা ঠাকরুণ, যেমন বলিচি অমনি তিনি এসে মোরে ভিক্ষা দেলেন। বেলা তখন দুপুর, রাত্তিরি ভালো দেখতি পাইনি; মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি, জগদ্ধাত্তিরি পিরতিমে। দশাসই চেহারা, হর্তেলের মত রং, দেখে ভক্তি হোল। বললাম—মা খিদে পেয়েচে।

 মা বললেন—কি খাবা?

 বললাম—ঝা দেবা। তখন তিনি বাড়ির মধ্যি গিয়ে আধ-খুঁচি চিঁড়েমুড়কি এনে আমার ঝুলিতে দেলেন। মুই মোছলমান সেজেচি, গড় হয়ে পেরণাম করলি সন্দেহ করতি পারে, তাই হাত তুলে বললাম—সালাম, মা—বলে চলে এ্যালাম। কিন্তু ইচ্ছে হচ্ছিল দু’পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে লুটিয়ে পেরণাম করি। তারপর চলে এ্যালাম—

 নিলু এতক্ষণ কাঠের পুতুলের মত দাঁড়িয়ে শুনছিলো, এইবার বললে—সে যদি মরেই গিয়েচে দাদা, তবে আবার তোমাদের দলের লোকে বলে জিভ কাটলে কেন? সে কিসে মরেচে তা আজো কেউ জানে না।

 —দিদিমণি তুমি কি বোঝো। নীলকুঠির লোক গিয়ে তার দুটো ছেলেকে উন্তোন-কুন্তোন করবে। বলবে, তোর বাবা কনে গিয়েচে। এ আজ ছ’সাত বছরের কথা। লোক জানে বীরো হাড়ি গঙ্গার ধারে আর একটা বিয়ে ক’রে সেখানেই বাস করচে। মোর সাংড়ার লোক রটিয়ে দিয়েচে। ওর ছেলে দুটো

৮৮